রাজধানীর উপকণ্ঠের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে ইউরোপিয়ান ডলফিন শো। এ জন্য আপাতত এক জোড়া ডলফিন দম্পতি যোগ হচ্ছে চিড়িয়াখানায়। আরও যোগ হবে বাহারি পাখির দুর্লভ বার্ড শো। এ ছাড়া আফ্রিকা অঞ্চলের প্রাণী, বাংলাদেশি প্রাণী, গৃহপালিত প্রাণী, অন্যান্য প্রাণী ও নাইট সাফারি এই পাঁচ জোনে বিভক্ত হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। সিঙ্গাপুরের চিড়িয়াখানার আদলে হবে নাইট সাফারি, যেখানে পড়ন্ত বিকালে কিংবা রাতের রঙিন আলোয় বিভিন্ন অ্যাক্রোব্যাট দেখবেন দর্শকরা। এ ছাড়া রাতেও প্রাণীদের দেখতে পারবেন তারা। এসব কারণে চিড়িয়াখানা শুধু দিনের বিনোদনকেন্দ্র হবে না। দিন ও রাত দুই বেলায়ই চিড়িয়াখানায় বিনোদন নিতে পারবেন আগত দর্শনার্থীরা। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিঙ্গাপুরের আদলে চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। নতুন দিনের দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মোভেবল বা ভাসমান রেস্তোরাঁর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনায়। এ ছাড়া শিশুদের জন্য মিনি পার্কের ব্যবস্থা থাকবে। শিশুপার্কে ইলেকট্রিক ট্রেন, মেরি গো রাউন্ড, ম্যাজিক শোসহ আরও কয়েকটি আইটেম থাকবে। আর মুজিববর্ষ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ বা পাঁচ থেকে ছয় সদস্যের পরিবার যেন পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখতে পারে- সে জন্য ট্রাভেলকার সংযুক্ত হচ্ছে। জানতে চাইলে কিউরেটর আবদুল লতিফ বলেন, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ বা ছোট পরিবারের লোকদের পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরিয়ে আনতে ট্রাভেলকারের ব্যবস্থা হচ্ছে। ছয় বা ১০ আসনের ট্রাভেলকার হবে। লেকে নৌকা চালানোর উপযোগী করা হচ্ছে।
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত সরকারি এই চিড়িয়াখানার ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমিতে বাঘ, ভালুক, হরিণ, অজগরসহ প্রায় তিন হাজার প্রাণীর বসবাস। ১৯৭৪ সালে হাই কোর্ট এলাকা থেকে বর্তমান অবস্থানে চিড়িয়াখানাটি স্থানান্তরিত হয়। ওই বছরের ২ জুন চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪৮ বছর পর চিড়িয়াখানার উন্নয়নে ১৫ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত চিড়িয়াখানা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বারনার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড ঢাকায় চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নের কাজ করতে আগ্রহ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। জানা গেছে, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকা ও রংপুরের চিড়িয়াখানার আধুনিকায়ন করতে চায় অধিদফতর। কয়েক বছর আগে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই চিড়িয়াখানার উন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল। সরকার চিড়িয়াখানা দুটির আধুনিকায়ন প্রকল্পে নজর দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী চিড়িয়াখানার ডিজিটাল ম্যাপ ও লে আউট প্ল্যান করা হয়েছে। ইনসেপশন ও ইন্টারিং রিপোর্ট করা হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ডকুমেন্টস তৈরিসহ বাকি কাজ চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই করা হবে। কিউরেটর বলেন, ‘প্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়ন করা হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জাতীয় চিড়িয়াখানাকেও আধুনিকায়ন করতে চাই। মাস্টারপ্ল্যানের চারটি ধাপ। এখন আমরা মাত্র দুটি ধাপ সম্পন্ন করছি। আমরা ইনসেপশন ও ইন্টারিং রিপোর্ট করেছি। এখন ড্রাফট ও ডিপিডি তৈরি বাকি। এর মধ্যে আমরা ডিজিটাল ম্যাপ পেয়েছি। লে-আউট প্ল্যান পেয়েছি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এখানে উঠে এসেছে। এটা ফাইনাল হলে ডিজিটাল ড্রাফট করা হবে।