বর্তমানে গবেষণার জন্য ১৭১টি করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন জমা হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পপরিসরে পরীক্ষার পর্যায়ে আছে ১৯টি এবং বিস্তৃত পরিসরে পরীক্ষার পর্যায়ে আছে ২৫টি এবং ব্যাপক আকারে পরীক্ষার পর কার্যকারিতা মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে ২১টি টিকা। ব্যাপক আকারে পরীক্ষার পর এরই মধ্যে কয়েকটিকে বিভিন্ন দেশ ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটির অনুমোদন দিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি।
আরেক খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) টিকা স্পুটনিক-ভি-এর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মেক্সিকো। মানবদেহে এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক ফলাফল জানার পর গত মঙ্গলবার এটির জরুরি ব্যবহারের ওই অনুমোদন দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। বিশ্বে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি এই মেক্সিকো। খবরে আরও বলা হয়, টিকা উৎপাদনকারী উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে করোনা টিকার সীমিত সরবরাহ পাওয়ার প্রেক্ষাপটে রুশ টিকা ব্যবহারের এই উদ্যোগ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে তাদের টিকাদান কর্মসূচি চালু রাখার চেষ্টা টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। মেক্সিকোর উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো লোপেজ-গেটেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কফপ্রাইস স্পুটনিক-ভি টিকার জরুরি ব্যবহার অনুমোদন দিয়েছে।’ এর আগে গত বছর ব্যাপক পরিসরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) ছাড়াই রুশ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল মেক্সিকো। এদিকে স্পুটনিক-ভি টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন-এমন দুই হাজার লোকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটির কার্যকারিতা নিয়ে চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে মঙ্গলবার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এটির দুই ডোজ কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর। উল্লেখ্য, মেক্সিকো ছাড়াও এক ডজনের বেশি দেশ স্পুটনিক-৫ টিকা ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ভেনেজুয়েলা, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, আর্জেন্টিনা, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশ রয়েছে।
ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা : করোনাভাইরাসের (কভিড ১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে অনেক দেশেই চলছে টিকাদানের তোড়জোড়। কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে তৈরি করেছে টিকা। অনেক দেশ এখনো করছে। সর্বশেষ নতুন আসা দুটি টিকার শেষ ধাপের পরীক্ষায় বড় ধরনের কার্যকারিতা দেখা গেছে। টিকা তৈরিতে এগিয়ে থাকা তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর মধ্যে ফাইজার ও মডার্না আরএনএ প্রযুক্তির টিকা তৈরি করেছে, যা পদ্ধতি হিসেবে নতুন। এতে দ্রুত টিকা তৈরি করা সম্ভব। এতে ভাইরাসের জেনেটিক কোডের ক্ষুদ্র একটি অংশ দেহে প্রবেশ করানো হয়। এতে করোনাভাইরাসের একটি অংশ তৈরি করতে শুরু করে এবং শরীর এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ প্রযুক্তির টিকা যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাটি আলাদা। এতে নিরীহ ভাইরাস ব্যবহার করে শরীরে জেনেটিক উপাদান প্রবেশ করানো হয়। এ টিকাটি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে অনুমোদন পেয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকাটি অন্য দুটি টিকার চেয়ে প্রয়োগ ও সংরক্ষণ করা সহজ। সব কটি টিকার দুটি ডোজ করে দিতে হয়। তবে যুক্তরাজ্য যতটা সম্ভব বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং দ্বিতীয় ডোজ দিতে দেরি করছে। এদিকে নতুন আরও দুটি টিকা বাজারে আসার পথে। একটি নোভাভ্যাক্স আর অপরটি হলো জেনসেন। যুক্তরাজ্যে বৃহৎ পরিসরে নোভাভ্যাক্সের টিকার পরীক্ষা চালানো হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে নোভাভ্যাক্সের টিকা ৮৯ দশমিক ৩ শতাংশ কার্যকর। নোভাভ্যাক্সের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। আর জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি টিকা মাঝারি ও গুরুতর পর্যায়ের কভিড-১৯ প্রতিরোধে ৬৬ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করেছে। বিশ্বব্যাপী তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। তবে জনসন জানিয়েছে, শুধু গুরুতর পর্যায়ের কভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকাটি ৮৫ শতাংশ কার্যকর। এই টিকা তৈরিতেও অক্সফোর্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জনসনের টিকা এক ডোজের। আমেরিকান ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফাইজার’ এর সহযোগিতায় ‘বায়োএনটেক’ নামের একটি জার্মান বায়োটেকনোলজি কোম্পানি করোনার টিকা তৈরি করেছে। ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশে উল্লেখ করার মতো টিকা তৈরি হয়েছে। চীনা গবেষকরা তৈরি করেছেন সিনোভ্যাক, ক্যানসিনো ও সিনোফার্ম নামের টিকা। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেকগুলো দেশের সঙ্গে তাদের চুক্তিও হয়েছে। এর মধ্যে চীনের ১০ লাখ মানুষকে সিনোফার্ম টিকা দেওয়া হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রাশিয়ার তৈরি টিকা স্পুুটনিক-ভি ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকা ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ। এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এমন দাবি করা হয়। এর আগে টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছিল এটা ৯৫ শতাংশ কার্যকর। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে ১৭১টি টিকা। টিকার নিরাপত্তা নিয়ে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষার পর্যায়ে আছে ১৯টি, বিস্তৃত পরিসরে পরীক্ষার পর্যায়ে আছে ২৫টি এবং ব্যাপক আকারে পরীক্ষার পর কার্যকারিতা মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে ২১টি টিকা। ব্যাপক আকারে পরীক্ষার পর টিকা এরই মধ্যে কয়েকটিকে বিভিন্ন দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটির অনুমোদন দিয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, করোনার নতুন ধরনগুলো বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে জনসন ও নোভাভ্যাক্সের ব্যাপক কার্যকারিতা দেখা গেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, অন্য যে কোনো টিকার তুলনায় এ দুটি বেশ ফলপ্রসূ। তবে ভবিষ্যতে টিকার আরও পরিবর্তন আনতে হতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।