কথা ছিল খেলাপি ঋণ কেনার জন্য একটি কোম্পানি গঠন করবে সরকার, যার নাম হবে ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’। এ নামে একটি আইনের খসড়াও তৈরি হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, কোম্পানি নয়, তার পরিবর্তে একটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করাই সমীচীন হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে পৃথক একটি কোম্পানি গঠনের জন্য আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পর সম্প্রতি কেবিনেট কমিটি এ ধরনের মতামত দিয়েছে বলে জানা গেছে।
কেবিনেট কমিটির এই মতামতের পর এখন খেলাপি ঋণ আদায়ে কোন পথে হাঁটবে সরকার? কোম্পানি না করপোরেশন গঠন হবে? নাকি আগের মতোই খেলাপি ঋণ আদায়ে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগটি থেমে যাবে-এসব প্রশ্নের উত্তর আপাতত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। নানা উদ্যোগের পরও ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমছে না। ঋণ নেওয়ার পর বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক খেলাপি হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এমনকি ব্যাংকের পরিচালকরাও এখন যোগসাজশ করে একে অপরের ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করে দিচ্ছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে তথ্য দিয়েছিল, সে অনুযায়ী দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকারও বেশি। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আইন, ২০২১ আইনের খসড়া পর্যালোচনার জন্য কেবিনেট কমিটিতে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে কেবিনেট কমিটি এর ওপর গত ২ ফেব্রুয়ারি সভা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে কোম্পানির পরিবর্তে করপোরেশন করার বিষয়ে কমিটির অধিকাংশ সদস্য ওই সভায় মতামত দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন পর্যালোচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কমিটি কিছু পর্যালোচনা দিয়েছে। তারা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুনঃপরীক্ষার পাশাপাশি করপোরেশন করা যায় কি-না উদ্যোগী মন্ত্রণালয়কে সেটি বিবেচনা করতে বলেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কমিটি মূলত একটি পৃথক আইনের মাধ্যমে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছেন, বর্তমানে যেসব সরকারি কোম্পানি আছে, তার কোনোটিই পৃথক আইনে তৈরি হয়নি। প্রচলিত কোম্পানি আইনেই কোম্পানি গঠন করা যায়। সে কারণে ওই আইনের বাইরে একটি কোম্পানি গঠনের জন্য পৃথক আইন করা সমীচীন হবে না বলে মতামত দেয় কমিটি। আর সে সময় কোম্পানির পরিবর্তে করপোরেশন করার পক্ষে মতামত দেন কমিটির অধিকাংশ সদস্য।জানা গেছে, ২০১৬ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত খেলাপি ঋণ আদায়ে ‘ডেট রিকভারি এজেন্ট কোম্পানি’ গঠনের লক্ষ্যে আইনের খসড়া প্রণয়ন করেন।তবে ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিরোধিতা করে বলেছিল, ভারত ও পাকিস্তানে এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়। কোম্পানি গঠনের বদলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় ঋণ আদায়ে এজেন্ট নিয়োগের পক্ষে মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখেনি। পরে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে বাজেট ঘোষণার আগে বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের কথা জানান। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই অনেক খেলাপি ঋণ আদায় করা যাবে। যেগুলো স্বাভাবিকভাবে আদায় করা কঠিন হবে, সেগুলো আদায়ে এ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে জানিয়ে ওই সময় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ কোম্পানি শক্তি খাটিয়ে নয়, নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে ঋণ আদায় করবে। এটি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানও হতে পারে। এরপর বেশ কয়েকটি সভা করে, বিভিন্ন সংস্থার মতামত নিয়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আইনের খসড়াটি করেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।