রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রধান চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান

করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি অগ্রাধিকার পাবে জীবন-জীবিকা

মানিক মুনতাসির

প্রধান চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান

করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ধুঁকছে স্বাস্থ্য খাত। মানুষ প্রতি মুহুর্তে লড়াই করছে জীবন ও জীবিকা নিয়ে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে প্রধান অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার। এ জন্য মানুষের জীবন ও জীবিকাকেও প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থবিভাগ। সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে বলে মনে করে অর্থবিভাগ। গত মাসের শেষ সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থবিভাগের বিশ্বস্ত সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে টানা প্রায় দেড় বছর ধরে চলে আসা করোনা মহামারীর ফলে এখন পর্যন্ত দেশে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে সিডিপি। আর ব্র্যাক ও পিপিআরসির জরিপের তথ্যমতে আয় কমেছে ৭০ শতাংশ মানুষের। একইভাবে বিশ্বের এলডিসিভুক্ত প্রায় সব দেশই বিনিয়োগ ও কর্র্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কঠিন এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়েও এসেছে। ফলে রপ্তানি বাজারে নতুন কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে সামষ্টিক অর্থনীতি আরও প্রকট সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য করোনার মধ্যে চীন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক দেশই বিদেশি বিনিয়োগ টানতে সক্ষম হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ এখানে সফল হতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলো প্রায় প্রস্তুত হয়ে আছে। করোনা মহামারী কেটে গেলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। যার ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সূত্র জানায়, করোনা মহামারীতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নাই। ফলে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকে তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কৃষি খাতকে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রীকীকরণ, সার, বীজের ভর্তুকি ও প্রয়োজনীয় উপকরণের পাশাপাশি এসব উপকরণ ব্যবহার ও আধুনিক কৃষি সম্পর্কে সম্যক ধারণা বাড়াতে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বছর জুড়েই।

জানা গেছে, চলতি বাজেটে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তিন বছরের মধ্যে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা হবে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং নতুন করে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। যার ফলে নতুন করে ৩ কোটি মানুষ দরিদ্রের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। ফলে সামনের দিনগুলোতে কর্র্মসংস্থান সৃষ্টি করা সরকারের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্বাস্থ্য খাত। তবে আসছে দিনগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সীমিত এবং অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের আয় কমে গেছে। ফলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে নতুন করে পরিকল্পনা নিতে হবে। জানা গেছে, অর্থবিভাগ মনে করে কভিড-১৯ পরবর্তী ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতি ফেরাতে হবে। শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে চাঙা করতে হবে। একইভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তা যারা ব্যাংক ঋণের বাইরে রয়েছেন তাদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। বৈদেশিক শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করতে হবে। যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন কভিড-১৯ পরবর্তী তাদেরকে ফেরত পাঠাতে হবে। আর যাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না তাদের জন্য দেশেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর