রাজধানীর মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ৭৯ নম্বর ‘রাখি নীড়’ ভবনের সামনে থেকে গ্যাস বের হলে গতকাল বিকালে সংস্কার করে বন্ধ করেন তিতাসের কর্মীরা। রাস্তার কাজ করতে মাটি খুঁড়লে গ্যাসলাইন কেটে গিয়ে সেখান থেকে গ্যাস বের হয় বলে মেরামত কাজে অংশ নেওয়া কর্মীরা জানিয়েছেন। এর আগে, গতকাল সকালে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি তিতাসকে জানায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
তিতাসের জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ শাখার (দক্ষিণ) ব্যবস্থাপক শবিউল আউয়াল জানান, সকালে ফায়ার সার্ভিস ও রমনা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরে তিতাসের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি খুঁড়ে গ্যাস বের হওয়ার উৎস খুঁজে পায়। রাস্তা সংস্কারের জন্য মালিবাগ-মগবাজার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এতে মাটির নিচে থাকা গ্যাসের লাইন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকেই গ্যাস বের হচ্ছিল। পরবর্তীতে লিকেজ সংস্কার করা হলে গ্যাস বের হওয়া বন্ধ হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভবনটির আশপাশে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কল করে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি জানান। পরে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইউনুস আলীর নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেলে তিতাসকে জানায়। পরবর্তীতে লাইন সংস্কার কাজ শুরু করে তিতাস।গতকাল বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে ধীরগতিতে সংস্কার কাজ চলছে। ভবনটির চারপাশে লাল ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। গ্যাস বের হলে রাস্তার একপাশ বন্ধ করে সংস্কার কাজ চলে। সন্ধ্যার পর কাজ শেষ হলে আবার রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। ভবনটি এভাবে ফেলে রাখলে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা। তারা দ্রুত ভেঙে ফেলার দাবি জানান। রাখি নীড়ে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় করা মামলাটি শনিবার রাতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে। সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনার পর একটি লাইন শনাক্ত করি। ওই লাইন থেকে ঘটনার পর গ্যাস বের হওয়ারও প্রমাণ পাই। গতকাল যেখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল সেই লাইনের সঙ্গে আমাদের শনাক্ত করা লাইনের মিল পেয়েছি। আমরা এখন জানার চেষ্টা করছি এর নেপথ্যে কারও গাফলতি ছিল কি না। সেটি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল পর্যন্ত এ বিস্ফোরণে নাশকতার কোনো আলামত আমরা খুঁজে পাইনি। তবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ কিংবা তিতাসের লাইনে লিকেজ থেকে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এখন এর পেছনে কে বা কারা জড়িত সেটিই বের করার জন্য তদন্ত চলছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশনস) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, গতকাল ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত টিমের প্রধান পরিচালকের (অপারেশনস) নেতৃত্বে কমিটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে অন্যান্য সংস্থার গঠিত কমিটির কর্তকর্তা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্তমকর্তাও ছিলেন। সেখানে তদন্তের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম এ বিস্ফোরণ মিথেন গ্যাসসহ অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণ থেকে হয়েছে। ঘটনার পরপরই আমরা গ্যাস ডিটেক্টেরের মাধ্যমে রাখি নীড়ের ভিতরে একটি গ্যাসলাইনের অস্তিত্ব পাই। যে লাইনটি তিনতলা ভবনের ওপরের দিকে গেছে। লাইনটি আমরা চালু অবস্থায় পেয়েছি। বিস্ফোরণের পর ওই লাইন থেকে গ্যাস বের হওয়ার প্রমাণও পেয়েছি। গতকাল নতুন করে আবার তিতাস গ্যাসের লাইনের একটি লিকেজ পাওয়া গেছে। সেটি রাখি নীড়ের সামনে। এখন লাইনটি বৈধ হোক আর অবৈধ হোক ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত হয়েছে তিতাস গ্যাসের লাইন থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
তিতাসের জরুরি বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলাম জানান, মগবাজারের বিস্ফোরিত ভবনে তাদের কোনো সংযোগ ছিল না। তবে কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন ওই ভবনের সামনে দিয়ে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ করে। তারা যখন কাজ করে তখন তাদের বিষয়টি অবগত করেনি। আমরা ধারণা করছি, সুয়ারেজ লাইন বসানোর সময় শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে তিতাসের লাইনে কোনো ছিদ্র সৃষ্টি করেছে। হয়তো সেখান থেকেই পরবর্তীতে গ্যাস বের হচ্ছিল। গ্যাস বের হলে সেগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোন কারণে গ্যাস জমে গেলে সেখানে স্ফুলিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা আজ (গতকাল) থেকে গ্যাস লিকেজের কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছি। প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণে ৭৯ রাখি নীড় ধসে পড়ে। আশপাশে কম্পন তৈরি হয়ে ১৮টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই বিস্ফোরণে ১১ নিহতসহ দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করেছে।