রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উন্নয়নের অপেক্ষায় বগুড়া

সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেললাইন সংযোগ, পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর, অর্থনৈতিক জোন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা থাকলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

উন্নয়নের অপেক্ষায় বগুড়া

সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও সম্ভব হচ্ছে না বগুড়ার উন্নয়ন। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেললাইন সংযোগ, পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর চালু, অর্থনৈতিক জোন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার কথা থাকলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এগুলোর মধ্যে রেললাইন সংযোগ ও অর্থনৈতিক জোনের কাজ ধীরে হলেও এগিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর চালু ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কোনো সুসংবাদ নেই বগুড়াবাসীর জন্য। কোনো এক জটিলতায় থেমে আছে উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো। থমকে থাকায় বগুড়ার অগ্রগতিও থেমে আছে। অথচ জনজীবনে এখন উন্নয়নগুলো সময়ের দাবি।

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এ দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে যাত্রী ও কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বগুড়া থেকে তিন জেলার সীমানা পেরিয়ে প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। আর সড়কপথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে করে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। মহাসড়কে এখন যানজট থাকায় বাসে সময় কখনো কখনো ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সরাসরি ট্রেনযোগে পৌঁছতে সময়ে লাগবে এক থেকে সোয়া ঘণ্টা। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে বগুড়াসহ উত্তরের জেলার ট্রেনযাত্রীদের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সেই সঙ্গে খরচ কমে গিয়ে উত্তরের ট্রেনযাত্রীদের অর্থ সাশ্রয় হবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। একটি বেলাইল থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার এবং অপরটি হলো বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানীর হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প মোতাবেক নতুন ওই রেলপথে আরও সাতটি স্টেশন স্থাপন করা হবে। এগুলো হলো- রানীর হাট, আড়িয়াবাজার, শেরপুর, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, কৃষাণদিয়া ও সদানন্দপুর। প্রস্তাবিত ৮৪ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার সীমানায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৫১০ একর এবং সিরাজগঞ্জ অংশের ৩২ কিলোমিটার অংশের জন্য প্রয়োজন আরও ৪৫০ একর জমি। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (প্রকৌশল) ও বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিয়া জানান, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায়। ভারতের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর পরামর্শক নিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে। পরামর্শক নিয়োগ হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর নির্মাণকাজ শুরুর ২৫ বছরেও তা পূর্ণতা পায়নি। ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া নামক স্থানে বগুড়া স্টল বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। সেই সময় বগুড়া সদরের এরুলিয়া মৌজায় ১০৯ দশমিক ৮১ একর ভূমি হুকুমদখল করে কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৯৯৫ সালে জমি কিনতে ব্যয় ধরা হয় ২৮ লাখ টাকা। ৫ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০০ ফুট প্রস্থ রানওয়ে, অফিস ভবন, মূল গ্রাউন্ড, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আশা করা হয়। সে হিসেবে ২০০১ সালের শুরুতে বগুড়ার আকাশে বিমান উড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জেলাবাসী। বিমান উড়বে উড়বে করেও আর ওড়েনি। বগুড়াবাসীর বহু আশার বিমানবন্দরও আর চালু হয়নি। শেষ পর্যন্ত লোকসানের আশঙ্কায় সরকারিভাবে বিমান সার্ভিস চালু করা হয়নি। সম্প্রতি বগুড়া বিমানবন্দর চালুর দাবি জোরালো হলে বাংলাদশ বিমানবাহিনী সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এরপর এ-সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দেওয়া হয় সরকারকে। ওই রিপোর্টে কী বলা হয়েছে তা জানা না গেলেও বগুড়াবাসী বিমানবন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর দাবি জানিয়েছেন। বগুড়া জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ের সঙ্গে আরও ৩ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে নির্মাণ, তেলের রিজার্ভার নির্মাণ, যাত্রী ও মালামাল হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য আরও প্রায় ১০০ একর জমি দরকার। সরেজমিন সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়া তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল শাজাহানপুর উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ২৫১ একর জায়গা পছন্দ করে। সেখানেই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হচ্ছে। শাজাহানপুর উপজেলায় ২৫১ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে দ্রুতই। টাকা পাওয়ার পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে হস্তান্তর করা হবে। বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে শিল্পনগরীখ্যাত বগুড়া তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

এ ছাড়া একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথাও উঠেছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে বগুড়ার কোনো কর্মকর্তার কাছেই তথ্য নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সব সম্ভাবনা রয়েছে বগুড়ায়। বিষয়টি নিয়ে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর অনুমোদিত হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হবে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউর হক জানান, বগুড়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমানবন্দর চালু করার বিষয়ে কোনো সুখবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুখবর পাওয়া গেলে তা জানানো হবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন ও অর্থনৈতিক জোনের কাজ এগিয়ে চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর