করোনা ভীতি দূরে সরিয়ে পাঁচ দিনের বইমেলায় নতুন প্রজন্মের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন-ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থের ব্যাপক বিক্রির ঘটনাবলির মধ্যদিয়ে এবারের নিউইয়র্ক বইমেলা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষকে মহিমান্বিত করেছে। এটাই হচ্ছে আয়োজকদের বড় সাফল্য এবং এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনের বছরের বইমেলায় বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পুস্তকের ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের সমাহার ঘটানো হবে। ১ নভেম্বর সোমবার রাতে ৩০তম নিউইয়র্ক বইমেলার সমাপনীর প্রাক্কালে এ সংবাদদাতাকে এই মেলার মূল উদ্যোক্তা-সংগঠক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে প্রবাস প্রজন্মের মধ্যকার আগ্রহ আমাকে অভিভূত করেছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও তার ইংরেজি অনূদিত কপি নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা মেলায় এসে ক্রয় করেছেন। হুমায়ূন আজাদের লেখা ‘আওয়ার বিউটিফুল বাংলাদেশ’র বেশ কিছু কপি বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই এবং লেখক সাংবাদিক হারুন হাবীব ও মুনতাসির মামুনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইগুলো।
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, স্কুল-কলেজগামী অনেক ক্রেতার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেন তারা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনীকে প্রাধান্য দিচ্ছেন? জবাবে প্রায় সবাই বলেছেন যে, স্কুল-কলেজে রচনা লেখার সময় বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত লিখতে এটা গভীর থেকে জানা জরুরি। সত্যিকারের ইতিহাস না জানলে রচনা লিখব কীভাবে-পাল্টা প্রশ্নের অবতারণা করেছেন ওরা।
ঢাকা থেকে আগত প্রকাশকদের স্টলের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বিশ্বজিৎ সাহা বললেন, প্রায় সবই ফাঁকা হয়ে গেছে। তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বই বিক্রি হয়েছে এবারের মেলায়। মেলা থেকে ফেরার সময় প্রায় প্রত্যেকের হাতেই ছিল বইয়ের ব্যাগ। অর্থাৎ করোনা আমাদের ব্যক্তিজীবনকে বন্দী করেছিল, তা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরিক্রমায় এবারের মেলার গুরুত্ব অপরিসীম বলে আমি মনে করছি। মেলার মাধ্যমেই প্রবাসীরা প্রাণখোলা আনন্দে মেতে উঠেছেন। দর্শক, পাঠক এবং শ্রোতার ঢল দেখে আয়োজকদের সবাই মুগ্ধ-অভিভূত।এদিকে বইমেলায় শ্রেষ্ঠ স্টলের জন্য ‘মুক্তধারা-কথা প্রকাশ পুরস্কার’ পেয়েছে ‘অনন্যা’ এবং মেলা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবীর কাছ থেকে তা গ্রহণ করেন মনিরুল হক। পুরস্কারের মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা। এটি ছিল তৃতীয় বছরের পুরস্কার। প্রথমটি পায় ইত্যাদি এবং দ্বিতীয়টি পেয়েছে কালি ও কলম প্রকাশনা সংস্থা। সমাপনীতে সামনের বছরের ৩১তম বইমেলার আহ্বায়কের নামও ঘোষণা করা হয়। তিনি হলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য গোলাম ফারুক ভূইয়া।
‘বই আমার শক্তি-বই আমার মুক্তি’ স্লোগানে এবারের বইমেলার প্রতিটি পরতেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রচনা এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার পরিপূরক আলোচনা হয়েছে।