বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্রোয়েশিয়ায় লাগবে কঠোর পরিশ্রম

নির্মাণকাজ ফুড ডেলিভারি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন প্রবাসীরা

জিন্নাতুন নূর, জাগ্রেব (ক্রোয়েশিয়া) থেকে ফিরে

ক্রোয়েশিয়ায় লাগবে কঠোর পরিশ্রম

ইউরোপের একটি সুন্দর দেশ ক্রোয়েশিয়া। রাজধানী জাগ্রেব। শহরটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বড় নামি-দামি সব ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকান। সেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পোশাকের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ লেখা পোশাকও। ইউরোপের অন্য বড় শহরগুলোর মতো জাগ্রেবেও দেখা মেলে বাংলাদেশিদের সঙ্গে। তবে সেখানে তাদের টিকে থাকার মূল মন্ত্রই হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম। দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রোয়েশিয়ার বিভিন্ন শহরে বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ বাংলাদেশি বাস করছেন। এর মধ্যে জাগ্রেবেই আছেন ১৫০ থেকে ২০০ জন। যেসব বাংলাদেশি এখানে কাজ করছেন, এদের বেশির ভাগই অবকাঠামোগত নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া কিছু আছেন কাঠের ফ্যাক্টরিতেও। এখন কেউ কেউ রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন। আবার কেউ খাবার ডেলিভেরির কাজও করছেন। সাইফুল ইসলাম তন্ময় (২৭)। তিন বছর ধরে ক্রোয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি যখন ক্রোয়েশিয়ায় আসি তখন বাংলাদেশিদের তেমন একটা এখানে আসতে দেখা যায়নি। তখন পরিচিত দু-তিনজন ছাড়া কোনো বাংলাদেশিকে এখানে দেখা যায়নি। জাগ্রেবের রাস্তায় আমি তখন বাংলাদেশিদের খুঁজতাম। আমরা যখন ক্রোয়েশিয়া আসি তখন দক্ষ জনবল হিসেবে আসিনি। যারা বাংলাদেশ থেকে আমাকে এনেছিল তারা অবশ্য দক্ষ জনবল বলেই এখানে নিয়ে আসেন। আসার পর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভাষাগত সমস্যা। ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকরা খুব একটা ইংরেজি ভাষা বোঝেন না। এই যুবক জানান, এখানে কাজ করে মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ ইউরো উপার্জন করা সম্ভব। (১ ইউরো=৭.৫৩ কুনা)। তিনি আরও জানান, প্রথমে কয়েক মাস তিনি ক্রোয়েশিয়ার একটি কাঠের ফ্যাক্টরিতে চালক হিসেবে কাজ করেন। প্রথমে কাজ তেমন একটা না জানলেও পরে কাজ শিখে নেন। কিন্তু বাংলাদেশি হওয়ার কারণে তন্ময়ের বেতন খুব একটা বাড়াচ্ছিল না তার মালিক। এরপর কষ্ট হলেও চাকরি বদলে অন্য চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি খাবার ডেলিভেরির কাজ করে মাস শেষে ৮০০ ইউরো উপার্জন করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আরও জানান, প্রথমদিকে তারা এই দেশে কিছুটা বর্ণবৈষম্যের শিকার হন। তখন বাংলাদেশিদের দেখলে সেখানকার নাগরিকরা কথা বলতে চাইত না। তাদের এড়িয়ে চলত। খারাপ একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তন্ময়ের আরেক বন্ধু জানান, ক্রোয়েশিয়া আসার পর প্রথমদিকে একদিন বাসায় যাওয়ার জন্য তিনি কোন বাসে উঠবেন তা জানতে এক ক্রোয়েশিয়ান নাগরিককে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু সেই লোকটি তাকে দেখেই এড়িয়ে যান। তাতে মনে হলো যে ভয় পেয়েছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে যারা কঠোর পরিশ্রম করার মন-মানসিকতা নিয়ে ক্রোয়েশিয়া আসবেন এবং সেখানকার মানুষের আস্থা অর্জন করবেন তাদের জন্য সেখানে কাজের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আগের তুলনায় দেশটিতে বর্ণবৈষম্যও অনেকাংশে কমে গেছে। ক্রোয়েশিয়ান নাগরিকদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণও করেন। ক্রোয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস নেই। পাসপোর্ট সংক্রান্ত সুবিধাদির জন্য এখানে থাকা বাংলাদেশিদের অস্ট্রিয়ার হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। জানা যায়, ক্রোয়েশিয়ার দায়িত্ব এখন নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন নিয়েছে। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশিরা চান সেখানে একটি বাংলাদেশ হাইকমিশন গড়ে উঠুক। বিশেষ করে পাসপোর্ট নবায়ন করা, টাকা পাঠানোর মতো বিভিন্ন ঝামেলায় বাংলাদেশিদের পড়তে হয়। আর রেসিডেন্ট কার্ড না থাকলে ব্যাংকে গিয়ে দেশে টাকা পাঠানো যায় না। এজন্য যদি ক্রোয়েশিয়ায় একটি বাংলাদেশ হাইকমিশন তৈরি হয় তাহলে প্রবাসীরা যে কোনো সমস্যায় সরাসরি সেখানে যোগাযোগ করতে পারবেন। কিন্তু কমিউনিটি তৈরি না হওয়ায় কোনো বিপদে পড়লে এখানকার প্রবাসীরা কারও কাছে সাহায্য চাইতে যেতে পারেন না। ক্রোয়েশিয়ায় অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি যুবক মনে করেন, যেহেতু দেশটিতে তারা বৈধভাবে নিয়ম মেনে কাজ করছেন এবং দেশে আসা-যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এ জন্য ক্রোয়েশিয়ার পার্শ্ববর্তী অন্য দেশে যাওয়ার জন্য তারা তেমন একটা উৎসাহী নন। ক্রোয়েশিয়ায় ৯০ ভাগ কোম্পানি তাদের কর্মীদের আবাসন ভাতা প্রদান করে। আর খাবারের জন্য ১১০ ইউরো দিচ্ছে। এরপর নিজের হাত খরচ বাদে একজন বাংলাদেশি যদি সর্বনিম্ন ৫০০ ইউরো আয় করেন তাহলে বাকি অর্থ তারা দেশে পাঠাতে পারেন।

সর্বশেষ খবর