রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নাগরিক জীবনে চরম নাভিশ্বাস

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, উন্নয়ন যন্ত্রণা কিশোর গ্যাংয়ের দাপট

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

নাগরিক জীবনে চরম নাভিশ্বাস

জলাবদ্ধতায় দিনদুপুরে নালায় ডুবে করুণ মৃত্যুতে আহাজারির শহর চট্টগ্রাম। একদিকে কর্ণফুলীর জোয়ার আর সমুদ্রের ঢেউ, অন্যদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ের ঢলে জলজট, যত্রতত্র পলিথিনসহ আবর্জনার ভাগাড়ে নালাগুলোও ফুলে-ফেঁপে তীব্র পূতিগন্ধময় দশা। চরম নাভিশ্বাস। নতুন করে আসা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ছাপিয়ে উন্নয়নের যাতনা খানাখন্দে ভরা সড়কপথ দিনভর ভোগাচ্ছে চট্টলবাসীকে। আছে যানজট, মশার উৎপাতও। চোরাগোপ্তা চাঁদাবাজি, ছিঁচকে চুরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের ত্রাস। মাঠ বিলীন হচ্ছে। সংকুচিত হচ্ছে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রগুলো।

বাড়ছে হাইব্রিড, অসহিষ্ণু হচ্ছে রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিও। ক্রমে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে ভাঙছে একান্নবর্তী পরিবার, সামাজিক আদব উবে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। শহরের নালাগুলোর ওপর পর্যাপ্ত স্লাব না থাকায় বৃষ্টি কিংবা কর্ণফুলীর জোয়ারের পানিতেই নালায় ডুবে ঘটছে মৃত্যু। পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিলও থেমে নেই। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পাহাড়গুলো থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়নি বছরের পর বছর ধরেও। বর্ষা এলেই সাময়িক মাইকিং ও নিষ্ফল অভিযানে ফের মৃত্যুঝুঁকি থেকেই যায়। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে বিকল্প বাসস্থানের প্রতিশ্রুতিও কার্যকর হয়নি। শহরের প্রায় অর্ধেক এলাকায় এখনো চসিকের আলোকায়ন নেই। মেয়র জানালেন, আরও অন্তত ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ভারতীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৮০ শতাংশ আলোকিত হবে চট্টগ্রাম শহর।

জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বপ্ন তো আশার গুড়ে বালি! মেগা প্রকল্প নিয়েও এ থেকে নিস্তার নেই।শহরের বুক চিরে বিমানবন্দর অভিমুখো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রক্রিয়ার যন্ত্রণায় নিত্য জট তো লেগেই আছে।?

ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নে নগরে বাড়তি আবাসের অনুপাতে বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবা উপরন্তু বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই বললেই চলে। আবার সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া ঘিরেও ওঠে প্রাকৃতিক নৈসর্গ দুমড়ে অপরিণামদর্শিতার অভিযোগ। জনজট ও পরিবহনের আধিক্যে যানজটে কর্মঘণ্টার অপচয় ও ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

করোনার ধকল কাটিয়ে দেশের অন্য অঞ্চলের মতো শিক্ষায়তনেও আছে অস্থিরতা। শিক্ষা সংকট বাড়ছে, এ খাতেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে দুর্নীতির।

কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে অতিষ্ঠ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলোর এ গ্যাংনির্ভরতায় সামনের নির্বাচন ও সমাজজীবনে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কাও করছেন অনেকেই। ছাত্র সংগঠনগুলোর অস্থিরতা যেন বিপন্ন করছে নগরজীবনকেও। এত সব সংকটের বিপরীতে জনপ্রতিনিধিরাও অনেকে যেন দায়হীন। উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার প্রশ্নেও তাঁরা যেন ‘কানে তুলো, পিঠে কুলো’ বেঁধেছেন। তাঁদের অনেকের নীরবতার সুযোগে চসিক, সিডিএ, ওয়াসাসহ উন্নয়ন ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় তো নেই-ই, বরং এসবে দুর্নীতিবাজদের চলছে যেন মহোৎসব। সমস্যা ও সংকটের সাতসতেরোয় চট্টগ্রামবাসীর জীবনে নাভিশ্বাস এখন চরমে। এর ওপর আছে নেতৃত্বের রেষারেষি, নাগরিক সচেতনতার অভাবও।

এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কোন পক্ষে যাবে মানুষ, তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। নগরবাসীর দুর্দশা-সংকটের সমাধান পথচিত্র বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরলেও তা শোনার যেন গরজই নেই দায়িত্বশীলদের।

সব মিলিয়ে নানা সংস্থায় লাখো-কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে অসীম স্বপ্নের মধ্যেও নিদারুণ সংকটে আছে চট্টলজীবন।

সর্বশেষ খবর