বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১০ শিক্ষক লাপাত্তা!

চাকরি দেশে, অনেকে থাকেন বিদেশে - অনেকের বিরুদ্ধে চলছে বিভাগীয় মামলা

আকতারুজ্জামান

এক মাসের ছুটি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ভ্রমণের উদ্দেশে ইতালি যান নোয়াখালী সদরের খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা করিম। গত বছরের আগস্টে এই ছুটি নেন তিনি। ছুটি শেষ হওয়ার পর এই শিক্ষিকা যোগদান না করায় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে গত বছরের নভেম্বরে তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। গত জুনে এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি পাঠানো হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। নোয়াখালী সদরের উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান খান প্রতিবেদককে জানান, গত ১০ অক্টোবর এই শিক্ষিকা সশরীরে  স্কুলে হাজির হয়ে যোগদান করেছেন। কিন্তু পরদিনই শারীরিক অক্ষমতাজনিত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় ‘রিজাইন লেটার’ দিয়েছেন তিনি।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আউলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালমা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনি। অনুপস্থিতির জন্য এ শিক্ষকের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা অফিসার। একই উপজেলার ইসলামপুর দরগাভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নায়িমা সুলতানা। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনি। অনুপস্থিতির জন্য কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে এ শিক্ষকের কাছে। বন্ধ করা হয়েছে বেতন-ভাতাও। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু তাহমিনা করিম, উম্মে সালমা আর নায়িমা সুলতানাই নন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একটি প্রতিবেদন বলছে- সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১০ জন শিক্ষক কর্মস্থল থেকে লাপাত্তা হয়েছেন। চাকরি দেশে থাকলেও অনেকে থাকেন বিদেশে। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার কারণে কারও কারও বিরুদ্ধে করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা। মেডিকেল ছুটি, কেউ বিদেশ ভ্রমণ ছুটি, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ সফরসহ নানা কারণে ছুটি নিয়েছেন এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পর তারা আর কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। কর্মস্থলে দীর্ঘদিন উপস্থিত না হওয়ায় দফায় দফায় নোটিস করে কোনো জবাব না পাওয়ায় কোনো কোনো শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অনুপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে ৩৬ জন প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচজন রয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের ৭৯ জন, রাজশাহী বিভাগের ৪৭ জন, রংপুর বিভাগের ৩৫ জন, খুলনা বিভাগের ৩৪ জন, বরিশালের ৩৩ জন, সিলেটের ১১৯ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৬৩ জন শিক্ষক কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ প্রতিবেদনে ৪১০ শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম এলেও প্রকৃত চিত্র আরও বেশি। তিনি বলেন, বিদেশে কোনো শিক্ষক গেলে অনেকক্ষেত্রে শারীরিক অক্ষমতার কথা বলে পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু আসলেই তিনি অক্ষম কি না এমন পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জনের কাছে যেতে বললে অপারগতা দেখান শিক্ষকরা। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। অপরাধের ওপর ভিত্তি করে এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর