ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে এরই মধ্যে ঢাকাসহ গোটা দেশ প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া ও দমকা বাতাসের কারণে এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে অনেক উপজেলার বিদ্যুতের তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকালে জানায়, আরইবির ২০টি সমিতির ওপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর কারণে আরইবির ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৭০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন। একইভাবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) দেড় লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সব মিলিয়ে গতকাল বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৩৬ লাখ গ্রাহক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যুৎহীন ছিলেন। আরইবির প্রধান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাতাস বইতে শুরু করেছে এ জন্য আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বন্ধ রেখেছি। ঝড় যখন থেমে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করব। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব প্রস্তুতি আমাদের আছে। ঝড় আঘাত হানার পর বিদ্যুতের লাইন পুনর্বাসনের জন্য সব প্রস্তুতি আমাদের আছে।’
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরইবি থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঢাকার কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিকভাবে দেশের অন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা জানা যায়নি। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সাতটি সমিতির গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। মূলত এই সাতটি পিবিএস ঝুঁকির মধ্যে থাকায় আগে থেকেই সতর্কতা হিসেবে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরইবির ভৌগোলিক এলাকা বাদে খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর ফরিদপুর বিভাগের ২১টি জেলা ও ২০টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওজোপাডিকো। এ সংস্থার আওতায় বরিশাল বিভাগের ভান্ডারিয়া, নলছিটি, কাঁঠালিয়া, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের দেড় লাখের বেশি গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎহীন আছেন। আবহাওয়া খারাপ হলে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। চরফ্যাশন, নড়াইল, ভোলা, বরগুনা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ এরই মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া খুলনা শহরেও আংশিক বন্ধ আছে বিদ্যুৎ। জানা যায়, ওজোপাডিকোর মূল কন্ট্রোল রুম থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হচ্ছে। ঝড়ের কারণে সংস্থাটির কর্মীদের নতুন করে রোস্টার করে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলাকালে ২৪ ঘণ্টা দিন-রাত ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করবেন। এ অবস্থায় কোনো জায়গায় বিপজ্জনকভাবে তার ছিঁড়ে গেলে সংস্থাটির কর্মীরা মেরামত করবেন।