রাজবাড়ীতে তৈরি বিখ্যাত ‘ক্ষীর চমচম’; যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। ক্ষীর চমচম একটু রসালো হয়। খাঁটি দুধের ছানার শুকনো মাওয়া থেকে তৈরি করা হয় ক্ষীর। এ ক্ষীরের প্রলেপ জড়িয়ে তৈরি হয় ক্ষীর চমচম। কারিগররা জানিয়েছেন, প্রথমে দীর্ঘ সময় গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ছানা। সেই ছানা থেকে তৈরি হয় চমচমের মূল ভিত্তি। এগুলো চিনির রসে ভিজিয়ে প্রথমে তৈরি করা হয় রসালো চমচম। রস থেকে চমচম আলাদা করে তার ওপর ক্ষীরের প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হয় ক্ষীর চমচম। বর্তমানে দুধ, চিনির দাম ও কারিগরদের মজুরি বেশি হওয়ায় ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম। উৎসব-পার্বণে মিষ্টির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে নির্দিষ্ট দামেই বিক্রিই হয় ক্ষীর চমচম। সুস্বাদু হওয়ায় জেলা ও দেশের গন্ডি পেরিরে ক্ষীর চমচমের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বে। জেলা শহরে বেশকিছু মিষ্টির দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ভাদু সাহা ও শঙ্কর সাহার চমচম বেশি জনপ্রিয়। এ ছাড়া মিষ্টিবাড়ী, হোসেন মিষ্টান্ন ভান্ডার, বানিবহ দধি ভান্ডারসহ কয়েকটি দোকানে পাওয়া যায় ক্ষীর চমচম। বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর বাজারের সাহা মিষ্টান্ন ভান্ডার ব্যাপক জনপ্রিয়। রাজবাড়ীর মিষ্টির ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। আত্মীয়স্বজন এলে খাবারের তালিকায় এ মিষ্টি রাখা হয়।
এ ছাড়া জেলার বাইরে কোনো আত্মীয়বাড়ি গেলে ক্ষীর চমচম নিয়ে যাওয়া হয়। এ মিষ্টির প্রশংসা ব্যাপক। আমেরিকাপ্রবাসী আবুল হোসেন শেখ বলেন, ‘আমি যতবার দেশে আসি আমার খাবার তালিকায় এ ক্ষীর চমচম থাকেই। আমার প্রবাসী বন্ধুরা সুস্বাদু এ মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করেন। যত জায়গায়ই গিয়েছি রাজবাড়ীর মতো ক্ষীর চমচম পাইনি। রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম দেশ ও প্রবাসের গর্ব।’ রাজবাড়ীর নির্মল মিষ্টান্ন ভান্ডারের (ভাদু সাহার) পরিচালক পরিমল সাহা বলেন, ‘বাবার সুনামের পেশা ধরে রেখেছি দীর্ঘদিন। আমরা প্রতিদিন অনেক মিষ্টি বিক্রি করি। আমাদের প্রধান আইটেম ক্ষীর চমচম।’ ব্যবসা প্রসারে সরকারের সাহায্য কামনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য কমানোর অনুরোধ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন যে অবস্থা তাতে বাবার ব্যবসাটা ধরে রেখেছি মাত্র।’ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বলেন, ‘রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভোক্তারা পরিচ্ছন্ন ও সুস্বাদু মিষ্টি পান। এ ক্ষীর চমচমের গুণগত মান সত্যিই ভালো। ক্ষীর চমচম রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্য ও গর্ব।’