সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাদশা নোভা, আসছে নতুন সিংহ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাদশা নোভা, আসছে নতুন সিংহ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

সাধারণত একটি সিংহ বাঁচে ১৫-১৭ বছর। কিন্তু চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় থাকা সিংহ বাদশার বয়স প্রায় ২০ বছর এবং সিংহী নোভার বয়স ১৮ বছরের বেশি। আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। পাল্টে গেছে চামড়ার চিত্র। দুর্বল হয়ে পড়েছে শারীরিকভাবে। দুই প্রাণীই এখন অনেকটা মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হচ্ছে নতুন দুটি সিংহ-সিংহী। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, বয়স হওয়ায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শূন্য হতে পারে সিংহ-সিংহীর খাঁচা। তাই এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া সিংহ-সিংহী চেয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করে আসছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। দেশে খোঁজ না পাওয়ায় বাদশা-নোভার উত্তরসূরি পেতে খোঁজ করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে মিলেছে বাদশা-নোভার উত্তরসূরি। এ মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক জোড়া সিংহ আসবে চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এক জোড়া সিংহসহ পাঁচ প্রজাতির প্রাণী আনা হচ্ছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চিড়িয়াখানায় থাকা বাদশা-নোভার আয়ু শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে তারা। খাবারেও অরুচি। পাল্টে গেছে চামড়ার রং। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এমন আশঙ্কায় এক বছর ধরে দেশের সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া সিংহ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি। তাই আফ্রিকা থেকে এক জোড়া সিংহ আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। শিগগিরই সিংহ জোড়া চিড়িয়াখানায় আসবে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, ২০০৫ সালের ১৬ জুন চিড়িয়াখানায় সিংহী নোভা ও শোভার জন্ম হয়। জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ এবং বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। তখন থেকেই একই খাঁচায় দুই বোনের বসবাস শুরু হয়। পুরুষ সঙ্গীর জন্য প্রায় এক যুগ নিঃসঙ্গভাবে বিষণœ দিন কাটে তাদের। নিঃসঙ্গতা কাটাতে প্রাণিবিনিময় প্রথা অবলম্বন করে ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে সিংহ বাদশাকে চট্টগ্রামে আনা হয়। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের শোভাকে পাঠানো হয় রংপুর চিড়িয়াখানায়। সে বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নানা আয়োজনের মাধ্যমে নোভা ও বাদশার বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভাববিনিময়ের ১০ দিন পর তাদের এক খাঁচায় দেওয়া হয়। তবে তাদের কোনো উত্তরসূরি হয়নি। কিন্তু এদের আয়ু শেষ হওয়ার আগে নতুন সিংহ চিড়িয়াখানায় আনা উচিত ছিল। এদের মৃত্যু হলে আবারও সিংহশূন্য হয়ে পড়বে বিনোদন কেন্দ্রটি।  

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এটি প্রতিষ্ঠা হয়। তবে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে আমূল পরিবর্তন হয় চিড়িয়াখানার। বর্তমানে এখানে ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশু-পাখি আছে। এর মধ্যে বাঘ, সিংহ, কুমির, জেব্রা, ময়ূর, ভালুক, উটপাখি, ইমু, হরিণ, বানর, গয়াল, অজগর, শিয়াল, সজারু, বিভিন্ন জাতের পাখি উল্লেখযোগ্য। আছে একটি বিরল সাদা বাঘসহ ১৩টি বাঘ ও ছয়টি জেব্রা। নির্মাণ করা হয় নান্দনিক সিঁড়ি, পুরাতন খাঁচাগুলো ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে নতুন খাঁচা। কুমিরের খাঁচা সম্প্রসারণ করে করা হয় দ্বিগুণ। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রধান ফটক। বাড়ানো হয়েছে পশুপাখির সংখ্যা। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে ৩২ হাজার ১৬৪ বর্গফুট আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তা। সমস্ত চিড়িয়াখানা এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। নিচে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিস্তৃত পরিসরের কিডস জোন। দর্শনার্থীদের জন্য বানানো হয়েছে নান্দনিক বসার স্থান এবং পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। চিড়িয়াখানার তাপমাত্রা সঠিক রাখতে লাগানো হয়েছে হাজারেরও বেশি ফলদ ও বনজ বৃক্ষ। প্রাণিখাদ্য সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা স্টোর রুম, কোয়ারেন্টাইন রুম এবং অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক প্রাণী হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর