শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কমলামাথা দামা

আলম শাইন

কমলামাথা দামা

কমলামাথা দামা দোয়েল আকৃতির সুদর্শন পাখি। হাঁটেও দোয়েলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে। চেহারা, আকার-আকৃতিতে মিল থাকায় অনেকেই এদের দোয়েল বলেই জানে। এরা আমাদের প্রতিবেশী পাখি হলেও অনেক ভীতু এবং লাজুক স্বভাবের। তবে স্বভাবে লাজুক হলেও মানুষের একেবারে কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। মানুষও খুব একটা ক্ষতি করে না, বরং আদর করে নানা নামে ডাকে। কেউ ডাকে কমলাবউ, কেউ ডাকে কমলাফুলি, আবার অনেকেই ডাকে কমলা দোয়েল নামে। তবে ‘কমলা দামা’ নামেই এরা বেশি পরিচিত। দেশে যত্রতত্র কমলামাথা দামার বিচরণ রয়েছে। বেশি নজরে পড়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। রাজধানীর অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি স্থানেও এদের দেখা মেলে। বিশেষ করে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কমবেশি নজরে পড়ে। বাসা তৈরির উপযুক্ত গাছপালার অভাবে রাজধানী থেকে এরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাসা বাঁধার ব্যাপারে এরা যথেষ্ট খুঁতখুঁতে। পছন্দসই জায়গা খুঁজে না পেলে বাসা বাঁধে না। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, জাভা ও দক্ষিণ চীন পর্যন্ত।

পাখির বাংলা নাম ‘কমলামাথা দামা’। ইংরেজি নাম ‘অরেঞ্জ-হেডেড থ্রাস’ (Orange-Headed Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম Zootheracitrina।

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য লম্বায় ২০ থেকে ২২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও চেহারায় কিছু পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। প্রজাতির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক কমলা-বাদামি। তলপেট ও লেজের নিচের দিক সাদাটে। চোখের মণি গাঢ় পিঙ্গল। চোখের নিচ বরাবর পরপর তিনটি সাদা ছোপ। পিঠের পালক নীলাভ ছাই বর্ণের। পায়ের রং ফিকে গোলাপি। স্ত্রী পাখির বুকের রং সামান্য ফিকে। পিঠের ওপরের পালক ছাই ধূসর। প্রধান খাবার কীট-পতঙ্গ। সুযোগ পেলে কেঁচো, ছোট সাপের বাচ্চাও শিকার করে। খেজুরের রস এদের বেশ প্রিয়। রসের স্বাদ নিতে প্রায়ই খেজুর গাছের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে।

চমৎকার বাসা বাঁধে এরা। কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে শুকনো ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাস খানেক সময় লাগে। উড়তে শেখে ২০ দিনের মধ্যে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর