মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আসছেন ১৬ দেশের মন্ত্রী

ঢাকায় ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে যোগ দেবেন ১৩৪ বিদেশি প্রতিনিধি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

একসঙ্গে ঢাকা সফরে আসছেন বিশ্বের ১৬টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এই সময়ে ২৩টি দেশের প্রায় ১৩৪ জন প্রতিনিধিও অবস্থান করবেন ঢাকায়। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলন উপলক্ষেই একসঙ্গে তাদের এই সফর। আজ শুরু হবে এই সম্মেলনের কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক। কর্মকর্তাদের দুই দিনের বৈঠক শেষে হবে মন্ত্রীদের সম্মেলন।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৩টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরম ‘ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ)-এর বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। এতে ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরও ১০টি দেশ। ১৯৯৭ সালে আইওআরএ প্রতিষ্ঠিত হলেও ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। জোটের সহসভাপতি শ্রীলঙ্কা ও মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছে ইন্দোনেশিয়া।

সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ২৩ সদস্য দেশ থেকে ১৬টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩৪ জন বিদেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, মরিশাস, সোমালিয়া, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া থেকে মন্ত্রী পর্যায়ে নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, কমোরোস, ভারত, মালদ্বীপ, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউএই, থাইল্যান্ড এবং ইয়েমেন থেকে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া ডায়ালগ পার্টনার জাপানের একজন প্রতিমন্ত্রীও সম্মেলনে আসবেন। এ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি আসতেও চেয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে জানিয়েছেন, আসতে পারছেন না। তিনি আসতে না পারলেও টেলিফোনে কথা বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মূলত সমুদ্র নিরাপত্তা, সমুদ্র বাণিজ্য, দুর্যোগ প্রতিরোধ, মৎস্য ব্যবস্থাপনা, ট্যুরিজম, ব্লু ইকোনমি ইত্যাদি ইস্যু আইওআরএ সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য টেকসইভাবে ভারত মহাসাগরের সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো’। আইওআরএ মূলত দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক, সমুদ্র নিরাপত্তা, মৎস্য ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা, একাডেমিক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, ব্লু ইকোনমি এবং উইমেনস ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে। তবে এবারের সম্মেলন, প্যানেল ডিসকাশন, বিভিন্ন সেশন ও সাইডলাইন বৈঠকগুলোতেও ইস্যু হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় শুরু করতে মিয়ানমারের স্থিতিশীলতার প্রতি জোর দেবে ঢাকা। চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতিতে বৈশি^কভাবে যে জ্বালানি, গ্যাস ও খাদ্য সংকটের আলোচনা তৈরি হয়েছে সেটিও থাকবে আলোচনায়। এ ছাড়া সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত বাধাসমূহ, ট্রেড লজিস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যয়, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস, অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া একটি অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ঝুঁকিসহিষ্ণু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিনির্মাণে যে উদ্যোগ সেটিও গুরুত্ব পাবে। বাদ যাবে না যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সহযোগিতার উদ্যোগ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) বা ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন (আইপিভি), ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচলে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত ‘কোয়াড’-এর বিশ্লেষণও। সূত্র জানায়, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে ২১ বৈঠকে আলোচনা হলেও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভিন্নমতের কারণে আইওআরএ কৌশল নির্ধারণ করতে পারেনি। বাংলাদেশ এর আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে- অবাধ, মুক্ত, অন্তর্বর্তীমূলক ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখতে চায়। কোনো একক দেশের বা গ্রুপের আধিপত্য এখানে দেখতে চায় না বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর