সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাবাকে হত্যার পর ডাকাতির নাটক ছেলের!

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিলেন তারই ছেলে এইচ এম মাসুদ। এই ঘটনা তদন্তে নেমে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি ঘটনায় জড়িত ছেলেকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে হত্যায় সরাসরি জড়িত রুবেল নামে এক অটোচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ পিবিআইর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ধর্মগঞ্জ মাওলা বাজার এলাকায় পয়লা ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমের বাড়িতে ডাকাতিকালে বালিশচাপা দিয়ে তাকে হত্যা করা হয় জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করে। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ডাকাত দল বাসা থেকে নগদ ৩২ লাখ টাকা ও সিসিটিভি ডিভিআর নিয়ে যায়। তবে পিবিআইর তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। মামলার তদন্তে নেমে সম্পত্তির লোভে ছেলের পরিকল্পনায় বাবাকে হত্যার রোমহর্ষক ঘটনার সত্যতা পায়। হত্যায় জড়িত ছেলের সহযোগী রুবেলকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

এ সময় রুবেলের দেখানো স্থান থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর ও পাটের রশি উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমের হত্যাকান্ডের পর থেকেই পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা টিম মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে। তদন্তে জানতে পারে, পরিবারের পূর্ব পরিচিত অটোচালক মো. রুবেল তাদের বাজার-সদাইসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। কিন্তু ঘটনার পরে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, ঘটনার সময়ে ভুক্তভোগীর বাড়ির আশপাশে অবস্থান করছিলেন রুবেল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার বোনের বাসায় আত্মগোপনে থাকা রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। রুবেলের জবানবন্দিতে উঠে আসে হত্যার আসল রহস্য। নিহতের ছেলে এইচ এম মাসুদ সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং বাসায় থাকা টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করে। আর এ জন্য ৫ লাখ টাকায় রুবেলের সঙ্গে বাবাকে হত্যার চুক্তি হয়। ঘটনার দিন ৩১ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে রুবেলকে ফোন করে দ্রুত মাসুদের বাড়িতে আসতে বলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে খুলে রাখা হয় বাড়ির কলাপসিবল গেট ও রুমের দরজা। এরপর রুবেল সোজা মাসুদের রুমে প্রবেশ করে। রাত ১১টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে অটোচালক রুবেল ও ছেলে মাসুদ তার কক্ষে প্রবেশ করেন। প্রথমে ছেলে মাসুদ তার বাবার হাত পা ধরে, আর রুবেল গলা চেপে ধরে। এ সময় বাবা চিৎকার দিলে রুবেল বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছেলে মাসুদ ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন দিয়ে বাবার প্রেশার মাপেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবেলকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় এবং বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ডিবিআর বক্স বাইরে ফেলে দিতে বলে। পরে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ডাকাতির নাটক সাজায়। মাসুদকে পাটের রশি দিয়ে হাত পা এবং গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখতে বলা হয়। এরপর রুবেল তা করে টাকা ও ডিবিআর বক্স নিয়ে বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন নিহতের লাশ দাফন শেষে ছেলে মাসুদের পরামর্শে রুবেলকে আত্মগোপনে যেতে বলা হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাত্রাবাড়ীতে বোনের বাসায় আত্মগোপন করে।

সর্বশেষ খবর