সোমবার, ১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডুয়েলগেজ রেল ৮২ ভাগ কাজ শেষ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বন্ধ থাকা মিটারগেজে ট্রেন চলতি মাসে

আকতারুজ্জামান ও হাসান ইমন

ডুয়েলগেজ রেল ৮২ ভাগ কাজ শেষ

রেললাইনের কাজ চলছে জোরেশোরে -রোহেত রাজীব

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ স্থাপনের কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৮২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প’র আওতায় পাঁচটি স্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। মাটি ভরাটও শেষ হয়েছে রেললাইনের। কিন্তু এই ডুয়েলগেজ রেললাইনে এখনো কোনো লাইন স্থাপন শুরুই হয়নি। আগামী বছরের জুনে জুরাইন রেলগেট থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন পর্যন্ত ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। সে হিসেবে এই রুটে ডুয়েলগেজে রেল চলাচলের জন্য আরও এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। আর গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বন্ধ হওয়া মিটারগেজ লাইনে ট্রেন চলাচল চলতি মাসেই শুরু হবে বলে জানা গেছে।

এই ডুয়েলগেজ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দিনে ৩২ জোড়া অর্থাৎ ৬৪টি ট্রেন চলার সক্ষমতা তৈরি হবে। আর এর সুবিধা ভোগ করবে লাখ লাখ মানুষ। বর্তমানে মিটারগেজে মাত্র ৮টি ট্রেন চলাচল করছে। প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, এই প্রকল্পে মোট ৩৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল। ব্যয় না বাড়িয়ে প্রথম দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর ২০২০ সালের জুন, পরে ২০২১ সালের জুন এবং চতুর্থ দফায় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ডিসেম্বর পার হওয়ার পরও প্রকল্প কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প’ এর পরিচালক সেলিম রউফ প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হওয়ার পর মামলাসংক্রান্ত কিছু জটিলতায় সময় কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। প্রকল্পের কাজ শুরু করতেও বিলম্ব হয়েছে। ২০১৭ সালে এর কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। রেল রাস্তায় মাটি ভরাট শেষ হয়েছে। শুধু লাইন বসানো বাকি রয়েছে। পরিচালক বলেন, ডুয়েল লাইন করতে গিয়ে জমিসংক্রান্ত একটি জটিলতা ছিল। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি রাস্তা দেবে সিটি করপোরেশন। প্রকল্প শেষ করতে অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। ‘ডিফেক্ট লায়্যাবিলিটি’ ধরে আগামী বছরের জুনে এর কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন সেলিম রউফ। এর পরই ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে কমলাপুরের শহরতলি প্ল্যাটফরম থেকে। এই প্ল্যাটফরম থেকে জুরাইন পর্যন্ত নতুন নির্মিত হওয়া রেলপথটির স্লিপার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। স্লিপারগুলো তৈরি করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ। এখন চলছে রেলক্রসিং লাইনের কাজ। এসবের কাজও বেশির ভাগ শেষ হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ঝালাইয়ের কাজ চলছে। চলছে শেষ মুহূর্তের ফিনিশিংয়ের কাজও। রেললাইনের পাশাপাশি ঢেলে সাজানো হচ্ছে শহরতলি প্ল্যাটফরম। কমলাপুরের শহরতলি প্ল্যাটফরম থেকে জুরাইন পর্যন্ত পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ডুয়েলগেজের তিনটি রেলপথ।

প্রতিবেদকের কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলছে। কমলাপুর থেকে জুরাইন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অংশের কাজও এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণ কাজ এবং সেই সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন কাজের জন্য গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে মিটারগেজ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী। জানা গেছে, চলতি মে মাসেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

সর্বশেষ খবর