শিরোনাম
বুধবার, ৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শোচনীয় অবস্থা অঙ্ক ইংরেজিতে

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন উইংয়ের প্রতিবেদন

আকতারুজ্জামান

মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজির দক্ষতা শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে প্রায় সব বিষয়েই দক্ষতা অর্জনের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগ। আর শিখনফল অর্জনের দিক দিয়ে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে গেছে মেয়েরা। তবে সাধারণ (জেনারেল) শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি শ্রেণিতেই দক্ষতার ক্ষেত্রে শহরের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন উইংয়ের তৈরিকৃত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস (এনএএসএস)-২০১৯’ ও ‘লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশনস্ (এলএএসআই)-২০১৭’ শীর্ষক এই দুই প্রতিবেদন আজ প্রকাশ করা হবে। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) অডিটোরিয়ামে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

তথ্যমতে, সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ২৮ হাজার ১৯৪ জন, অষ্টম শ্রেণির ২৭ হাজার ৭৩৭ জন ও দশম শ্রেণির ২৭ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরুর আগে এই তথ্য সংগ্রহ করা হলেও দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পিছিয়ে যায় এর প্রতিবেদন প্রকাশ। প্রতিবেদন তৈরিতে আমলে নেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, বাড়ির কাজ তৈরিতে ব্যয়কৃত সময়, পিতা-মাতার শিক্ষাগত যোগ্যতাও। নম্বর স্কোর নয় বরং ব্যান্ড স্কোর ধরে মূল্যায়ন করা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের শিখন ও দক্ষতাকে। ব্যান্ড ৬ কে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ও ব্যান্ড ২ কে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া হিসেবে এই মূল্যায়ন করা হয়।

ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গণিতে ষষ্ঠ শ্রেণির মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখন ও দক্ষতায় ভালো মানে রয়েছে, অর্থাৎ ব্যান্ড ৬ অর্জন করেছে। অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে ভালো মানের এই ব্যান্ড প্রাপ্তির হার যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- ষষ্ঠ শ্রেণিতে গণিতে দক্ষতার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে রাজশাহী বিভাগ। এরপরই খুলনা বিভাগের অবস্থান। সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেণিতে রাজশাহী বিভাগের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। আর দশম শ্রেণিতে গণিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এরপরই রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেটের শিক্ষার্থীরা। দক্ষতার দিক থেকে দশম শ্রেণিতে গণিতে এগিয়ে আছে মেয়েরা। তবে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে এগিয়ে আছে ছেলেরা।

ইংরেজির ক্ষেত্রে দেখা গেছে- ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাত্র ৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালো মানের ব্যান্ড ৬ অর্জন করেছে। আর অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে এই ব্যান্ড প্রাপ্তির হার যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ ও ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। ষষ্ঠ শ্রেণির ২৯ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী সবচেয়ে কম ব্যান্ড স্কোর ২ পেয়েছে। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ, সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট। একই চিত্র অষ্টম শ্রেণিতে। কিন্তু দশম শ্রেণিতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এই শ্রেণিতে ইংরেজিতে দক্ষতার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ঢাকা বিভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ বিভাগ। তবে বাংলায় দক্ষতার ক্ষেত্রে তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক চিত্র লক্ষ্য করা গেছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলায় ভালো মানের ব্যান্ড স্কোর ৬ পেয়েছে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আর অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে এই স্কোরের হার যথাক্রমে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ব্যান্ড স্কোর (ব্যান্ড ২) পাওয়া শিক্ষার্থীর হার ষষ্ঠ, অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ১ দশমিক ৫ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, কভিড-১৯ এর আগে প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব হলো। বুধবার (আজ) প্রতিবেদন দুটি প্রকাশ করা হবে। কোন অঞ্চল, কোন বিভাগ এমনকি কোন স্কুলের শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়ে কেমন দক্ষতা বা শিখনফল অর্জন করেছে তা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে। এই প্রতিবেদনের তথ্য ধরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও শিখনফল উন্নয়নে কাজ করা সহজ হবে।

 

সর্বশেষ খবর