রবিবার, ৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতার ভোটে আসার আভাস তৎপর জাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বিএনপি নেতার ভোটে আসার আভাস তৎপর জাপা

খায়রুজ্জামান লিটন

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন ঘিরে গুঞ্জনের ডালপালা মেলছে। তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছে দলটি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী এবং জাতীয় পার্টি সাইফুল ইসলাম স্বপনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই সাঈদ হাসান।

প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সাঈদ হাসান বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আছে। আমি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন করলে দলীয় বাধা আসবে। আবার নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন হবে কি না, সেটিও একটা ব্যাপার। সবকিছু মিলিয়ে আমি ভাবছি। কয়েক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।’

সাঈদ রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন তিনি। পরে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি হন। সর্বশেষ ২০১১ সালের দিকে মহানগর বিএনপির যে কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনু সভাপতি ও শফিকুল হক মিলন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন সাঈদ।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম তোলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিনু ও সাঈদ। বিএনপি দুজনকেই মনোনয়ন দেয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দুজনেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পরে মিনুর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা হলে সাঈদ নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। সাঈদের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের বিষয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘সাঈদ তো বিএনপির কোনো কমিটিতে নেই। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে সাঈদ প্রার্থী হলেও আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা তো ভোটই দিতে যাব না।’ বিএনপি নির্বাচনে আসবে-এমনটা কয়েক দিন থেকেই বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ১৪ দল তাকে ইতোমধ্যে সমর্থন দিয়েছে। তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহীর ১৪ দল। প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বিএনপি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থী দেবে, বিষয়টি আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি। ধানের শীষ না হোক, বাঘ-ছাগল যে কোনো প্রতীকে তারা নির্বাচন করবে। এটা নিয়ে আমরা বিচলিত নই। আমরা চাই বিএনপি নিজ প্রতীকে নির্বাচনে আসুক। তবে জনগণ এবার আর ভুল করবে না।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব ইসলামী দল এবং ইসলামী মনোভাবাপন্ন অন্য দলগুলোকে মাঠে নিয়ে প্রচারণায় নামতে চায়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কারও সঙ্গে জোটে নেই। তারপরও ইসলামী দলগুলো আমাদের সমর্থন করবে। ইসলামী দলের বাইরেও যারা আছেন তারাও আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’ জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ভোট নিয়ে তারা খুব একটা আশাবাদী নন। দল চেয়েছে, তাই প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভোট কেমন হবে, সবাই জানে। তারপরও ভোটে অংশ নিতে হচ্ছে। জনগণ যাতে তার ভোটটা দিতে পারে-সরকারের কাছে সেই নিশ্চয়তা চাই।’

ভোটের মাঠে নামল জাপা : রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে নামলেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। নগরীর গণকপাড়া মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগরীর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপনকে এ সময় মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘রাজশাহী সিটিতে আমাকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা ভালো ফল করব। এ সিটির উন্নয়ন ও সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য কিছু পরিকল্পনা আছে। রাজশাহীর মানুষ এখনো জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছেন।’ তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে মশা নিধন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুটপাত দখলমুক্ত করায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। পুকুর ভরাট বন্ধ করে জলাশয় সংরক্ষণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, টেন্ডারসহ সিটি করপোরেশনে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে চান তিনি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে দেখানোর জন্য হলেও এ নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হবে। না হলে এর প্রভাব আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে। জাতীয় পার্টির নেতা রাহাত হোসেন, অধ্যাপক আবুল হোসেন, ওয়াসিউর রহমান দোলন, সামসুদ্দিন রেন্টু প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর