শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ভাঙন

প্রতিদিন ডেস্ক

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ভাঙন

কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজানের ঢলে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদের পানি ১৮ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ছাতক পয়েন্টে সুরমার পানি ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে এসব জেলার নিম্নাঞ্চল। লালমনিরহাটের ৪ হাজার পরিবার, নীলফামারীর ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে তিস্তা অববাহিকায় আবারও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে চতুর্থ দফা বন্যার কবলে পড়ল তিস্তা চরের মানুষ। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, বুধবার রাত থেকে পানি বাড়তে শুরু করে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

রংপুর : তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলোর কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারতের উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উত্তরের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে নদনদী ও হাওরের দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার সীমান্তবর্তী গ্রামীণ সড়কে পানি উঠেছে। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত নদী খাসিয়ামারার পাড় উপচে প্রবল বেগে লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি। সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন ওর রশিদ জানান, গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী সুরমা, লক্ষ্মীপুর, বগুলা, বাংলাবাজার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বাড়তে শুরু করেছে। করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। কাজিপুরের মেঘাই স্পারে দুই দফা ধস নেমেছে। নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে কাজিপুর উপজেলার নিশ্চিতপুর ইউনিয়নে, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, বেলকুচি উপজেলার ক্ষিদ্রচাপড়ি, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম, শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, কৈজুরী ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। চৌহালী উপজেলার ভূতের মোড়, খাসপুকুরিয়া উমারপুরে বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে। সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক জানান, পানি বাড়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি বাড়ছে। জিওব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

নীলফামারী : তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ী, খগা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘বুধবার রাত থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পূর্ব ছাতনাই এবং ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক বলেন, টাপুর চর, পাগলার চর, টেপাখড়িবাড়িসহ কয়েক গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ছোটখাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও অনেক বেড়েছে। দুধকুমার নদের অববাহিকার নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামনডাঙা ইউনিয়ন এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর