সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

যমুনা সুরমা মেঘনায় পানি বাড়ছেই

বগুড়ায় ভাঙন শুরু

প্রতিদিন ডেস্ক

যমুনা সুরমা মেঘনায় পানি বাড়ছেই

সিরাজগঞ্জে যমুনা, বরিশালের তজুমদ্দিন পয়েন্টে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে করে এসব স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তবে বগুড়ায় যমুনার পানি কমলেও বেড়েছে নদীভাঙন। পাশাপাশি কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

সিরাজগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় যমুনার পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনও শুরু হয়। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি ও বড়ালসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে নদী-তীরবর্তী অঞ্চল কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অবশ্য ভাঙন রোধে পাউবোর পক্ষ থেকে কয়েকটি পয়েন্টে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হয়েছে। ফসলের মাঠ তলিয়ে বসতবাড়িতেও পানি উঠতে শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, আরও দুই দিন পানি বাড়বে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

বরিশাল : বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদীর পানি আরও বেড়েছে। সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি গতকাল তজুমদ্দিন পয়েন্টে আগের দিনের চেয়ে ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সন্ধ্যায় বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুপুরে তজুমদ্দিন পয়েন্টে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার (২.২২ মিটার) ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে ঝালকাঠী পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার (১.৪০ মিটার) ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, একই নদীর পানি বেতাগী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং পাথরঘাটা পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ভোলার দৌলতখান উপজেলায় সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর পানি ৩৩ বিপৎসীমার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, কঁচা নদীর পানি উমেদপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার, বরিশালের হিজলা পয়েন্টে ধর্মগঞ্জ নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং পিরোজপুর পয়েন্টে বলেশ্বর নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অন্যান্য নদীর পানিও আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রতিদিন দুবার জোয়ারের সময় নদীতে পানি বাড়লেও আবার ভাটির সময় নেমে যাচ্ছে। জোয়ারের সময় নদীর পানি উপচে চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, আগামী অমাবস্যা পর্যন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। বগুড়া : বগুড়ায় যমুনার নদীর পানি কমলেও সারিয়াকান্দি উপজেলায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করায় উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী এবং বোহাইল ইউনিয়নের সম্পূর্ণ এবং হাটশেরপুর, সারিয়াকান্দি সদর এবং চন্দনবাইশা ইউনিয়নের নিচু এলাকার হাজারো পরিবার এখন পানিবন্দি আছেন। এদিকে কয়েক দিনের অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধারাবর্ষা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১৫ দিনে নদীভাঙনের শিকার হয়ে ১০০টির বেশি পরিবারের বাড়িঘর এলাকাছাড়া হয়েছেন। যমুনার ভাঙনে হারিয়েছেন তাদের ভিটেমাটি। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, পানি আরও কয়েক দিন কমতে থাকবে। তারপর আবারও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের কোনো বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পাউবো জানায়, পানি কমে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে  প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও কমে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। এদিকে পানিবন্দি প্রায় ৫০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ এখনো চরমে। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ কার্যক্রম চালু থাকলেও অনেকের হাতে ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন বানভাসীরা। এসব এলাকার মানুষজন গত ৪-৫ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘরের ভিতরে পানি ওঠায় ও জ্বালানি সংকটে অনেকেই রান্নাবান্না করতে পারছেন না। গোখাদ্য সংকটে গরু, ছাগলসহ গবাদি পশুগুলো পড়েছে বিপদে। স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে বন্যা কবলিত এসব পরিবার।

সর্বশেষ খবর