শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

তীব্র ঢেউয়ে ভাঙছে সড়ক

জলোচ্ছ্বাস, ১০ অঞ্চলে অস্থায়ী ঝড়ের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র ঢেউয়ে ভাঙছে সড়ক

কক্সবাজারে সাগরে তীব্র ঢেউয়ে ভাঙছে সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে যাচ্ছে ঝাউগাছ, তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ, তছনছ হচ্ছে বালিয়াড়ির রাস্তা ও হুমকির মুখে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় ৩ নম্বর সতক সংকেত জারি করা হয়েছে। এদিকে আগামী তিন দিনের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। দেশের ১০টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তাই সেসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে উপকূলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সব সমুদ্রবন্দরের তিন নম্বর সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমি নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে উত্তর ছত্রিশগড় এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, হল নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়বে। ঢাকায় দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ১০-১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ৩০-৪০ কিলোমিটার ওঠে যেতে পারে। আগামী তিন দিনের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : বৈরী আবহাওয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতের পাশাপাশি সাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে যাচ্ছে ঝাউগাছ, তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ, তছনছ হচ্ছে বালিয়াড়ির রাস্তা ও হুমকির মুখে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। গতকাল বেলা ১২টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেখা যায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল, বাতাসের গতিবেগও রয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি নেই। আর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। একের পর এক ভয়াবহ ঢেউয়ের আঘাতে তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ, তছনছ বালিয়াড়ির রাস্তা, উপড়ে যাচ্ছে ঝাউগাছ। একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে : বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদীর পানি কিছুটা কমছে। আবার কোনো নদীর পানি আরও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ৯টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করে প্রবাহিত হয়েছে।

এদিকে ভোলা খেয়াঘাট পয়েন্টে তেঁতুলিয়া নদীর পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার (১.৯১ মিটার) ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, বুড়িশ্বর নদীর পানি বাকেরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, লোহালিয়া নদীর পানি কাটিপাড়া এলাকায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং বাবুগঞ্জে বাবুগঞ্জ (সুগন্ধা) নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার চারটি নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া বাজারের নিচু বেড়িবাঁধ উপচে বাজারে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এবং পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বরগুনা সদর উপজেলা,পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, আমতলী ও তালতলী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার বসতবাড়ী, ফসলি জমি, মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাহিরের পরিবারগুলোকে এ সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনের বৃষ্টিতে পৌর শহরের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভাঙা রাস্তাগুলোতে ক্ষত ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তায় যান চলাচল সংকুচিত হয়েছে। পৌর শহরের ব্র্যাক মোড় থেকে বিকনা হয়ে বাসন্ডা ইউপি সড়কটি প্রায় ৯৫% ভাঙা কয়েক বছর ধরে। এই সড়কে মাঝে মাঝে বড় গর্ত হওয়ায় রিকশা অটোরিকশা চলাচল অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।

জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন : নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে দুই থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। বুধবার থেকে ২৪ ঘণ্টায় দুবার করে এভাবে তলিয়ে থাকছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকা পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে থাকলেও সব থেকে উঁচু এলাকা এই ম্যানগ্রোভ বনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রও দুই ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে, দুই দিন ধরে জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রর শেডে থাকা হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বাটাগুর বাচকা কচ্ছপগুলো নিরাপদ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামসহ বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পোর্ট পৌরসভার নিম্নাঞ্চলের অন্তত সহস্রাধিক বাড়িঘরে পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাটে তলিয়েছে অনেক এলাকা

শ্রেণি কক্ষে সাপ ব্যাঙ জোঁক! বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অহরহ প্রবেশ করে জোয়ারের পানি। একটু বৃষ্টি হলেও পানি জমে যায় কয়েকটি শ্রেণিকক্ষসহ অফিস কক্ষে। সেপটিক ট্যাংকের নোংরা পানিতেও সয়লাভ হয় অফিস কক্ষ। জোয়ারের পানির সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ে সাপ, ব্যাঙ, কেঁচো, জোঁকসহ নানা ধরনের উভচর প্রাণী। এসব দেখে ভয় পায় অনেক শিক্ষার্থী। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক পাঠদান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর