শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
কাল আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা

নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা আগামীকাল। গণভবনে সকাল ১০টায় এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জাতীয় কমিটির সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় এমপি এবং দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সাড়ে তিন হাজার নেতা-কর্মী এতে অংশ নেবেন। সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগে এ বৈঠক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠকে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের বিভিন্ন ফোরামের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তৃণমূল নেতারাও জানিয়েছেন, বিশেষ বর্ধিত সভায় আমরাও (তৃণমূলের) দাবি তুলে ধরব। আমাদের দাবি সংবিধান মেনে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। বিকল্প কোনো প্রস্তাব বা পন্থা তৃণমূল আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না।

দলের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, ‘বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর ও উপজেলা বা থানা বা পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাড়ে তিন হাজার নেতা উপস্থিত থাকবেন।’ দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূলত সাত ইস্যু নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের গাইডলাইন দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব, সরকারের উন্নয়ন প্রচার, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী হতে উদ্বুদ্ধ করা, গায়ে পড়ে বিবাদে না জড়ানো, সর্বোপরি ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে অথবা জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা দেশ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের ডাকা হচ্ছে নির্বাচনী বার্তা দেওয়ার জন্য। দেশি-বিদেশি যত চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রই হোক আমরা সংবিধান মেনেই নির্বাচন করব। নির্বাচনে যেন নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত থাকে। যাচাই-বাছাই করে দলের প্রয়োজনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা থাকবে। বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজপথে সক্রিয় থাকার নির্দেশনাও দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।’ জানা গেছে, চলতি বছরের শেষে ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের শুরুতে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়। এমন অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন যে চ্যালেঞ্জিং হবে- তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, মনে করছে আওয়ামী লীগ। দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে কীভাবে নির্বাচনের এই চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে হবে- সে বিষয়ে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় নেতাদের নির্দেশনাও দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বর্তমান সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে? কতগুলো মেগাপ্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে? এগুলো বাস্তবায়নের ফলে দেশের মানুষ কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে? এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার জন্যও দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেবেন তিনি। দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও কোন্দলসহ বিরোধপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল কী ভাবছে সে কথা তিনি আগে শুনবেন। পরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। নেত্রী কী বার্তা দেবেন- তা তিনিই ভালো জানেন। তবে আমরা ধারণা করছি, সব ভেদাভেদ ভুলে জয়ের প্রশ্নে, নৌকার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকা, ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে যে জনগণের উন্নয়ন হয়, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছানোর নির্দেশনা থাকতে পারে। সর্বোপরি যারা রাজনীতিকে বিরাজনৈতিককরণের খেলা শুরু করেছেন তাদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন বিশেষ বর্ধিত সভা হয়নি। সামনে নির্বাচন। সে কারণে এই বিশেষ বর্ধিত সভা বেশ গুরুত্ব বহন করে। জেলা-উপজেলা-থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা আসবেন। সঙ্গে দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখের কথা শুনে তারা আরও বেশি উজ্জীবিত ও সংগঠিত হবেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে বার্তা দেবেন-তৃণমূল সেই বার্তা নিয়ে ফিরে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবেন।’

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে শেখ হাসিনা হলেন সাহস, শক্তি ও অনুপ্রেরণা। শেখ হাসিনার কাছে এসে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কথা বলার সুযোগ পেলে শক্তি অনুপ্রেরণা আরও বেড়ে যাবে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করবে।’ জেলা-উপজেলা থেকে আসা দলীয় নেতা-কর্মী এবং নির্বাচিত একাধিক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ বর্ধিত সভায় আগে জেলা-উপজেলার নেতাদের কথা শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সমাপনী ভাষণ দেবেন। জেলা নেতারা দলীয় সভানেত্রীকে কাছে পেয়ে তাদের মনের কথা বলবেন, একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাবের কথা জানাবেন। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার মেহমান হিসেবে রবিবার গণভবনে যাব। কথা বলার সুযোগ পেলে অনেক কথাই বলা যাবে। কিন্তু মর্দা কথাটা হলো, আমরা কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ মানব না। দেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই যথাসময়ে নির্বাচন হবে-তৃণমূল নেতাদের একটাই দাবি’ সেটাই তুলে ধরব।’ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হায়দার এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার কথা শুনতে আমরা গণভবনে যাচ্ছি। নেত্রী যে বার্তা দেবেন- আমরা সেটাই তৃণমূলে বাস্তবায়ন করব। উন্নয়ন-অর্জনের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করব এটাই আমাদের শপথ। এ জন্য বিএনপি-জামায়াত যতই ষড়যন্ত্র করুক আমরা শক্তহাতে মোকাবিলা করব।’

সর্বশেষ খবর