শিরোনাম
শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
আবারও ধরপাকড়

ফের আতঙ্কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

শফিউল আলম দোলন

বিএনপি নেতা-কর্মীদের আবারও ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। বেশির ভাগ নেতা-কর্মীকে আটকের পর পুরনো কোনো নাশকতার মামলার অন্তর্ভুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তার আগে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুরনো ও স্থগিত মামলা সচল করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতারের পাশাপাশি মামলা ও রায় আতঙ্কেও পড়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার আকাক্সক্ষায় এ সরকার মামলা-হামলার পুরনো কৌশল অবলম্বন করছে। এজন্য সরকার প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষশূন্য মাঠ তৈরি করে আবারও খালি মাঠে গোল দিতে চায়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার ভীত হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা-গ্রেফতারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে ১০ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির ৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ২ সহস্রাধিক। ২৮ ও ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি কেন্দ্র করে কর্মসূচিস্থল ও আশপাশ এলাকা থেকেই ৪০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদকে বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশ যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে গাড়িচালকসহ আটক করে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা আরও সাত নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। ঢাকায় ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচি কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ী, কদমতলী ও ডেমরা থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন শুনানি শেষে আদালত থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। গ্রেফতার অন্য নেতারা হলেন ৬২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব মো. শাহিন, ৬২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম মুন্সী, ৬২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. আবির হোসেন মনির, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. নিয়ামুল হক, মো. নয়ন ও সালাহউদ্দিন আহমেদের গাড়িচালক কাজল। ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচিস্থল থেকে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদকে গ্রেফতার করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৩০টির বেশি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এ ছাড়া কয়েক শ গায়েবি মামলাও রয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত বিএনপির বিরুদ্ধে করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১। অজ্ঞাতনামা আসামি এর কয়েক গুণ বেশি।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শুরুর পর অস্বাভাবিক গতিতে মাত্র এক মাস ২০ দিনে রায় প্রদানের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি বেশ কয়েকটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। এবার তাঁর সঙ্গে যুক্ত করা হলো তাঁর স্ত্রী গৃহবধূ জোবাইদা রহমানকে। দলের আরও ৫ শতাধিক নেতার মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৩ শতাধিক মামলা রায়ের অপেক্ষায়।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে আছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা ও আটকে রাখা, যাতে তাঁরা কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। নিম্ন আদালতে কভার না করলে উচ্চ আদালত ব্যবহারের মাধ্যমেও মামলায় সাজা বহাল রাখা হচ্ছে। অথচ ওয়ান-ইলেভেনের সময় একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দায়ের করা মামলায় দণ্ড দেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই বছর ৩০ অক্টোবর হাই কোর্ট এ সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে সাত বছর। দুই বছরের বেশি কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রশাসন ও আদালতকে ব্যবহার করে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। ভবিষ্যতে তা আরও দীর্ঘায়িত করার নীলনকশা তৈরি করছে। এর অংশ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এসব মামলা।

সর্বশেষ খবর