রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

মণিপুরে ফের সহিংসতা

নিহত ৩, বাড়িঘরে আগুন

কলকাতা প্রতিনিধি

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুরে সহিংসতা কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় নতুন করে সহিংসতার ঘটনায় অন্তত তিনজন মারা গেছেন। নিহতরা কোয়াক্তা এলাকার মেইতি সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। সহিংসতার ঘটনায় কুকি সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরেও আগুন দেওয়া হয়েছে।

নতুন করে এ সহিংসতার কথা জানিয়েছে বিষ্ণুপুর জেলার পুলিশ। এখানকার কোয়াক্তা এলাকায় অসংখ্য মেইতি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। সেই স্থান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটারেরও বেশি আগে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত বাফার জোন।

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা নাগাদ বাফার জোন পেরিয়ে কিছু মানুষ মেইতি এলাকায় প্রবেশ করে। এর পরই তাদের ওপর গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। তাতেই এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের বাবা ও ছেলে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা সেই সময় তাদের বাড়ি পাহারা দিচ্ছিলেন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ।

বৃহস্পতিবার মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় সশস্ত্র বাহিনী ও মেইতি সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৩ জন আহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরই নতুন করে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটল।

উল্লেখ্য, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে প্রায় তিন মাস আগে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়েছিল। সেই থেকে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং আহতের সংখ্যা শতাধিক। একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

অশান্তির সূত্রপাত ৩ মে। মেইতি সম্প্রদায়ের তফসিলি উপজাতি (এসটি) মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে রাজ্যটির পার্বত্য জেলাগুলোতে ‘উপজাতি সংহতি মার্চ’ সংগঠিত হওয়ার পর ওই দিন প্রথম সহিংসতা শুরু হয়। এর পর থেকেই কয়েক মাস ধরে মণিপুরে লাগাতার সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। নারীদের ওপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা ও গুলির ঘটনা ঘটছে।

এরই মধ্যে সম্প্রতি দুই নারীকে বিবস্ত্র করে প্যারেড করানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায় দেশজুড়ে।

৪ মে ভারতের মণিপুরে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দুই নারীকে বিবস্ত্র করে প্যারেড করানো হয় বলে অভিযোগ। প্রায় আড়াই মাস পর ১৯ জুলাই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়। এক দিন পর ২০ জুলাই থেকে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার দিন থেকে মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের সংসদ। এ ঘটনায় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে দিনের পর দিন ভণ্ডুল হয়েছে সংসদের অধিবেশন। এই ইস্যুতে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধীরা। ৮ আগস্ট অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। ১০ তারিখ সংসদে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।

এমন এক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদরা গত সপ্তাহে মণিপুরের সহিংসতাকবলিত এলাকায় ঘুরে দেখেছেন, বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে গিয়ে কুকি ও মেইতি সম্প্রদায়ের মানুষ এবং নির্যাতিত-নিপীড়িত নারী ও দুর্গতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাশাপাশি মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্গতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিরোধী দলের নেতারা।

মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। এদের বেশির ভাগই ইম্ফল উপত্যকায় বাস করেন। অন্যদিকে নাগা ও কুকিসহ শতকরা ৪০ ভাগ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ প্রধানত পার্বত্য জেলাগুলোতে বসবাস করেন।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর