মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেপ্টেম্বরেই ভারতের সঙ্গে চুক্তি চায় সরকার

কোটায় ৬২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানির প্রস্তাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কোটা পদ্ধতিতে ভারত থেকে প্রায় ৬২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। উল্লিখিত খাদ্যের আমদানি এবং মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দিল্লিকে। ‘জি-২০’ বৈঠকে অংশ নিতে আগামী সেপ্টেম্বরে দিল্লি সফরের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ওই সফরে এই এমওইউ স্বাক্ষর করতে চাইছে সরকার। কোটা পদ্ধতিতে চাল, গম, ডাল পিঁয়াজসহ ছয় ধরণের খাদ্য আনার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গত রবিবার দুই দেশের মধ্যে ভারচুয়াল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, কোটায় নির্ধারিত পণ্যের একটি অংশ সরকারিভাবে জিটুজি পদ্ধতিতে টিসিবি ও খাদ্য অধিদফতর আমদানি করবে। বাকিটা আমদানি করবে বেসরকারি খাত। এই খাদ্যের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে আমরা একটি এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছি ভারতকে। দিল্লি যাতে খুব দ্রুত এমওইউ-এর খসড়াটি পাঠায়- সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা চাইছি আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রীর (দিল্লি) সফরেই কোটায় খাদ্যপণ্য আমদানির চুক্তিটি স্বাক্ষর করতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। কর্মকর্তারা জানায়, ভারচুয়াল মিটিংয়ে প্রতি বছর সবমিলিয়ে ৬১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য আমদানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ভারতকে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২৬ লাখ টন গম, ১০ লাখ টন চিনি, ৮ লাখ টন পিঁয়াজ, ১ লাখ টন মসুর ডাল, ৭০ হাজার টন রসুন এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন আদা আমদানির কোটা চাওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে এমওইউ স্বাক্ষর হলে অক্টোবর থেকেই কোটার পণ্য আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত মার্চে ভারতকে দেওয়া প্রস্তাবে মোট ৫২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য আমদানির কোটা চাওয়া হয়েছিল। এবার ২০ লাখ টনের স্থলে ২৬ লাখ টন গম এবং ৬ লাখ টনের স্থলে প্রতি বছর ৮ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানির কোটা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগের প্রস্তাবে ডাল না থাকলেও এবার ১ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানির চাহিদা দেখানো হয়েছে। বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী কোটার পণ্য আমদানিতে ভারতে প্রস্তাব পাঠাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে মালদ্বীপ ও ভুটান ভারত থেকে কোটা পদ্ধতিতে পণ্য আমদানি করে থাকে। ফলে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার পরও নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য আমদানির সুযোগ পেয়ে থাকে দেশ দুটি। এমওইউ স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশও সেই সুযোগ পাবে। এতে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছে সরকার।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে মাঝেমধ্যেই খাদ্যসহ নিত্যপণ্যে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভারত সফরে এ সংকট সমাধানে দেশটির সরকারের কাছে সহায়তা চান। তখন প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক খাদ্যপণ্য কোটায় নেওয়ার জন্য ভারতই প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে। গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠকে চাল, গম, চিনি, পিঁয়াজ, ডাল, আদা, রসুন এই সাত পণ্য কোটায় আমদানির প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ডাল বাদে ছয়টি পণ্য দিতে সম্মত হয় ভারত। পরে গত মার্চে ছয় ধরনের নিত্যপণ্য আমদানির কোটা নির্ধারণ করে, সে অনুযায়ী পণ্য দিতে প্রস্তাব পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর