মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি সেজে রোহিঙ্গার জালিয়াতি

মাহবুব মমতাজী

মোহাম্মদ জামাল (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। এতে তিনি বাংলাদেশি জাহেদ উদ্দিনের নাম ব্যবহার করেছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি দুবাইয়ে ছিলেন দীর্ঘদিন। দেশে ফিরে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করতে গেলেই বেরিয়ে আসে ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহেদ উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের মেম্বর। এই জালিয়াতিতে শামীম আশরাফ (৩০) নামে এক ফটোকপি ব্যবসায়ীর সহযোগিতা নিয়েছেন জামাল। ওই ফটোকপি ব্যবসায়ী জাহেদ উদ্দিনের কাগজপত্র ব্যবহার করে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে জামালের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করতে সহযোগিতা করেন। সন্দেহজনক মনে হলে নির্বাচন অফিসার খুরুশকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিমকে বিষয়টি জানান। চেয়ারম্যান তখন ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারকে ফোন করে সেখানে নিয়ে যান। মেম্বার জানান, জামাল তেতৈয়া সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নন। তিনি রোহিঙ্গা। পরে জামালের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর কক্সবাজার মডেল থানায় মামলা করেন জাহেদ উদ্দিন। প্রায় এক বছর মামলাটি তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে এর তদন্ত সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি কক্সবাজার জেলার এসআই আবুল কাশেম এ প্রতিবেদককে জানান, মামলার চার্জশিট তিনি গত সপ্তাহে আদালতে জমা দিয়েছেন। জামাল রোহিঙ্গা সেটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন। জামালের বাবা-মা ৮০-এর দশকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে যান। জামালও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দীর্ঘদিন দুবাইয়ে ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের রামুর এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর করোনা লকডাউনে আর ফিরে যেতে পারেননি। এরই মধ্যে তার ভিসা আর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সেই সময় রোহিঙ্গাদের তৎপরতা ঠেকাতে পাসপোর্ট নবায়নে জন্ম নিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়েই জামাল ধরা পড়েন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র, জাতীয় সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ও সীলমোহরসহ সবকিছু জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা। এ ছাড়া জামালের মা কদবানু ও বোন ছমিয়ার জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন অফিসে যাচাই করে ভুয়া বলে জানা যায়। তখনই জামালকে আটক করা হয়। আর শামীম আশরাফ পলাতক। সিআইডি বলছে, জামালের মতো বহু রোহিঙ্গা ২০১৯ সালের আগে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অথবা জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, জাতীয় সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত এবং জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর সিলমোহর জাল করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়।

সর্বশেষ খবর