মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

৯৯৯-এর সেবা পেয়েছে ২ কোটি মানুষ

পৌনে ৩ কোটি অপ্রয়োজনীয় কল

আলী আজম

‘আমি সাগর থেকে বলছি, আমাদের মাছ ধরার ট্রলারের তলা ফেটে গেছে। আমরা ডুবতে যাচ্ছি। আমরা কুতুবদিয়ার কাছাকাছি আছি, আমাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা নিন।’ গত ৫ আগস্ট মো. জাকির হোসেন নামে একজন এভাবেই তাদের বিপদের কথা জানান ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করে। ট্রিপল নাইন থেকে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং কুতুবদিয়া কোস্টগার্ডকে জানানো হয়। সংবাদ পেয়ে কুতুবদিয়া কোস্টগার্ডের একটি উদ্ধারকারী দল বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া উপকূল নিকটবর্তী এলাকা থেকে ডুবন্ত ফিশিং ট্রলার থেকে ১৮ জন জেলেকে উদ্ধার করে নিরাপদে উপকূলে পৌঁছে দেয়। ফিশিং ট্রলারটি ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট থেকে মাছ ধরার উদ্দেশে সাগরে রওনা দিয়েছিল। জেলেরা সবাই লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের অধিবাসী।

ঢাকা থেকে প্রায় ৯০০ টন সিমেন্ট নিয়ে মংলা যাচ্ছিল এমভি প্রিমিয়ার-৫ নামে একটি লাইটার জাহাজ। পথে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে মেঘনা নদীর উলানিয়া লঞ্চঘাটের কাছে এক পাশে কাত হয়ে পানি ঢুকে জাহাজটি ডুবতে শুরু করে। জাহাজটিতে ১৫ জন শ্রমিক আছেন। এমন তথ্য জানিয়ে ১৬ জুলাই বেলা পৌনে ১১টায় আসাদুজ্জামান নামে জাহাজের এক শ্রমিক ট্রিপল নাইনে ফোন দেন। টিপল নাইন থেকে খবর পেয়ে কালিগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ি পুলিশের একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করে। ১৪ জুন সকাল পৌনে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিজয় ৭১ হল’ থেকে এক শিক্ষার্থী ট্রিপল নাইনে ফোন করে জানান, তার হলের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্র বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহরণ ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ট্রিপল নাইন থেকে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে খিলগাঁও থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ গোড়ানের একটি বাসায় আটক শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্ত করে এবং উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি অপহরণের অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করে।

এভাবেই একের পর এক সেবা দিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯)। আস্থা অর্জন করে সহায়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো ট্রিপল নাইনে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিনে দিনে আস্থা বাড়ছে এই সেবাটির ওপর। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪৫টি কল এসেছে। এর মধ্যে সেবা পেয়েছেন ২ কোটি ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৬ জন কলের। যা মোট কলের ৪১.৯৯ শতাংশ। একই সময়ে ২ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৮টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। যা মোট কলের ৫৮.০১ শতাংশ। এর মধ্যে বিরক্তকর কলই ছিল ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ১০টি। জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রিপল নাইনের সেবা। যতই দিন যাচ্ছে ততই ট্রিপল নাইনের প্রতি জনগণ তার আস্থা ও ভরসা রেখেই চলছে। জনগণ যখনই বিপদে পড়ে তখনই ট্রিপল নাইনে ফোন দিচ্ছে। তাই এই সেবাটির চাহিদাও বাড়ছে। বাড়ছে সেবার মানও। আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে জনগণকে সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে জনগণ কিছু কিছু বিষয় জরুরি মনে করে কল দিলেও সেগুলো আমাদের কাছে জরুরি নয়। কারণ ট্রিপল নাইনে সব বিষয়ে সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। কেবলমাত্র পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়া সম্ভব। সব ধরনের সেবা পেতে জনগণ ট্রিপল নাইনে ফোন দিচ্ছে।

সম্প্রতি চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ে তথ্য জানতে অনেকে ফোন দিচ্ছেন। দেশের সব মেট্রোপলিটন এলাকায় ও কিছু জেলা শহরে এমডিটি (মোবাইল ডাটা টার্মিনাল) ও টিডিএস (থানা ডেসপাস সিস্টেম) চালু করার ফলে সেবাটি আরও সহজ হয়েছে। বিরক্তিকর বা অপ্রয়োজনীয় কল এড়াতে ট্রিপল নাইনে যুক্ত হচ্ছে অটোকলার।

 গ্রাহক ট্রিপল নাইনে ফোন দিলেই তার লোকেশন ও পরিচিতি অটোমেটিক চলে আসবে। ট্রিপল নাইন কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র গ্রাহকের সমস্যা শুনবে এবং দ্রুত সেবা দেওয়া চেষ্টা করবে। ট্রিপল নাইনে অটোকলার যুক্ত হওয়ায় বিরক্তিকর কল কমে যাবে। কেউ বিরক্তিকর কল দিলেই তার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অটোকলারের একটাই লক্ষ্য ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ট্রিপল নাইন চালুর পর থেকে অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন তা অনেক কমে আসছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। ট্রিপল নাইনের কর্মী বাহিনী দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণকে নির্বিঘ্নে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শতাধিক জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে জনবল রয়েছে ৪ শতাধিক। জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই বিরক্ত করার কলের জন্য দণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৭০ (১) সংশোধন করা হয়। এই আইনে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কল দিলে তাহার ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে প্রথমে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ নম্বরে জাতীয় হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেখানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে। ৮ অক্টোবর ৯৯৯ নম্বর পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৬ অক্টোবর থেকে ৯৯৯-এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আবদুল গনি রোডে পুলিশের ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিস, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশি সেবা দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। মোবাইল ও ল্যান্ডফোন থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এই সেবা নেওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর