দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে এ বছর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০০ ছুঁইছুঁই। ঢাকা ছাড়িয়ে দেশের গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৯ জন, মারা গেছেন ৪৯৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ২ হাজার ১৬৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৪২ আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৩২৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৮২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৫৭০ এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ২৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫০ হাজার ১৭০ এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪ হাজার ১৮৯ জন। আক্রান্তের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৬ হাজার ৩৭ জন। ঢাকায় ৪৬ হাজার ২৩৪ এবং ঢাকার বাইরে ৪৯ হাজার ৮০৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। আগস্টের ২২ দিনেই ৫২ হাজার ৫২৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে-তে ১ হাজার ৩৬ ও জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপের বিস্তারের মধ্যে শুধু রোগী ভর্তি নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও এ বছর বেড়েছে। জুন থেকে এ রোগে মারা যাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ওই মাসে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। জুলাইয়ে তা অনেক বেড়ে ২০৪ জনে গিয়ে পৌঁছে। আগস্টের ২১ দিনে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে; এ মাসে মৃত্যু হয়েছে ২৪২ জনের। এর আগে জানুয়ারিতে ছয়, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে দুই, মে-তে দুই ও জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত চট্টগ্রামে।আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চলতি আগস্টে চট্টগ্রামে দৈনিক একজন করে মারা যান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন ৯৫ জনের চেয়ে বেশি। আক্রান্ত সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গতকাল মারা যান দুজন, ২১ আগস্ট মারা যান দুজন, ২০ আগস্ট এক দিনেই মারা যান তিনজন নারী। তিনজনই মারা যান ডেঙ্গুর শক সিন্ড্রোমে। ১৯ আগস্ট মারা যান এক শিশুসহ দুজন। চলতি আগস্টেই আক্রান্ত হন ২ হাজার ৯১ জন। গড়ে দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছেন ৯৫ জনের বেশি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদি বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও অনেক জায়গায় জমে থাকে। এ ছাড়া এটি ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায়ও এডিস মশার জন্ম হচ্ছে। এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সবাইকে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে বাড়ির আশপাশ যেন পরিষ্কার রাখে এবং পানি জমিয়ে না রাখে। বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু হচ্ছে। জানা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৮৬৭ জন। এর মধ্যে ১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্ত হন ২ হাজার ৯১ জন। চলতি বছর জানুয়ারিতে আক্রান্ত হন ৭৭, ফেব্রুয়ারিতে ২২, মার্চে ১২, এপ্রিলে ১৮, মে-তে ৫৩, জুনে ২৮৩, জুলাইয়ে ২ হাজার ৩১১ এবং আগস্টের গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ জন আক্রান্ত হন।