বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

খাবার সংকটে বানর

মোস্তফা মতিহার

খাবার সংকটে বানর

বানর হচ্ছে প্রকৃতির অনন্যসুন্দর এক আদিম প্রাণী। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, সিমিয়ান প্রাইমেট গণের তিনটি দলের মধ্যে দুটির সদস্যরা সাধারণভাবে বানর নামে পরিচিত। চিড়িয়াখানা ছাড়া দেশের বিস্তীর্ণ গহিন অরণ্যে যখন বানরের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে, তখন রাজধানীর বানরগুলোই স্তন্যপায়ী অন্যতম আদিম প্রাণী হিসেবে ইতিহাসের অংশ দখল করে রেখেছে। অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ডও দুষ্টামির কারণে বানর জনসাধারণের কাছে অধিক সমাদৃত প্রাণী। এরা নিরামিষভোজী। এদের প্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে কলা, বীজ ও লতাপাতা। বানরের হাত-পা সাধারণত লম্বা। এ হাত-পায়ের সাহায্যে এক গাছ থেকে অন্য গাছে চরে বেড়ায় এবং ঝুলে থাকতে পারে। বেশির ভাগ বানরের মুখমণ্ডল লোমহীন ও ফ্যাকাসে। এরা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। এ দলের নেতৃত্বে থাকে একটি পুরুষ বানর। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে আর দাপিয়ে বেড়ানোই দুষ্টু প্রাণী বানরের বিশেষ স্বভাব। এরা বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবেও সমাদৃত। বিশ্বে প্রায় ২৬০ প্রজাতির বানর রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয় প্রজাতি। বানরের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো খাটোলেজি বানর, আসামি বানর, প্যারাইল্লা বানর/লম্বালেজি বানর ও রেসাস বানর। ঢাকার প্রাচীনতম সৌন্দর্যের প্রাণী হিসেবে বানরের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ, নবাবপুর, লালবাগ, তাঁতীবাজারজুড়ে একসময় দুষ্টু প্রকৃতির এই প্রাণীদের বিচরণ ছিল উল্লেখ করার মতো। নানা প্রতিকূলতা ও খাদ্য সংকটে ঢাকার বানরগুলো বর্তমানে বিলুপ্ত প্রাণীর কাতারে রয়েছে। পুরান ঢাকার বনগ্রাম, নবাবপুর ও লালবাগে এখন আর আদিম এই প্রাণীটিকে দেখা যায় না। তবে গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের কারখানার কাঁচামালের গুদামে বানরের উপস্থিতি এখনো চোখে পড়ার মতো। গরম সহ্য করতে পারে না বলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজেদের গুটিয়ে রেখে পড়ন্ত বিকালে আর গোধূলিবেলায় কাঁচামালের গুদাম থেকে সাধনার আঙিনায় নেমে আসে সৃষ্টির রহস্যময় প্রাণী বানরেরা। এ সময়টাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও দূরদূরান্ত থেকে আগত কৌতূহলী দর্শনার্থীরা এ এলাকার বানরগুলোকে কলা, রুটিসহ বিভিন্ন রকমের খাবার দিয়ে থাকেন। যার কারণে খাবারের সংকটে ভুগতে থাকা ক্ষুধার্ত বানরগুলো এ সময়টায় লোকালয়ে নেমে আসে। আর কৌতূহলী দর্শনার্থীরাও নিজেদের হাতে বানরকে খাইয়ে আনন্দিত হয় এবং সেই আনন্দের দৃশ্যগুলো অনেকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করেন। এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আগে এখানে ৫ হাজারের মতো বানর থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা ৭০০ থেকে ৮০০-তে নেমে এসেছে। সাধনা ঔষধালয় এলাকার বাসিন্দা গেন্ডারিয়ার শামসুল আলম জানান, খাদ্যসংকটেই এখানকার বানর বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। ক্ষুধার জ্বালায় বানরগুলো এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির জানালার গ্রিল দিয়ে জামাকাপড় এনে রাস্তায় ফেলে দেয়। এমনকি নানা রকমের খাবারও নিয়ে যায়। বানরের উৎপাতে এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। তার পরও তিনি চান বিলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা পাক বানর। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, খাবার সংকটে এভাবে বানর কমতে থাকলে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে গেন্ডারিয়া তথা সাধনার ঐতিহ্য আদিম স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো।

শামসুল আলম আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এখানকার বানরগুলোর জন্য প্রতিদিন ৩০ কেজি খাবার সরবরাহ করতেন। বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের আমলে তা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এলাকার বাসিন্দা ও সাধনার সরবরাহ করা খাবার দিয়েই কোনোরকমে দিনাতিপাত করছে গেন্ডারিয়ার বানরগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও বানরগুলো এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর