বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর মানব পাচার চক্র

ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর সৈয়দ মশাহিদ আলী নামের এক যুবককে খুন করেছে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা! এর আগে তাকে জিম্মি করে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই চক্র। পরে দাবি করে আরও ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে মশাহিদকে খুন করা হয়, অভিযোগ ভিকটিম পরিবারের।

গতকাল সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন মশাহিদের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম।

লিবিয়ায় নিহত সৈয়দ মশাহিদ আলী সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের সৈয়দ আশহাদ আলীর ছেলে।

সানোয়ারা জানান, তার স্বামী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০২০ সালে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুরের পড়ারগাঁও গ্রামের ‘আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সদস্য’ শাহীন আহমদের স্ত্রী আমিনা বেগম তালুকদার আকলিমা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আকলিমা তাদের জানান, তার স্বামী লিবিয়ায় থাকেন এবং জনশক্তি রপ্তানির কাজ করেন। তিনি মশাহিদকে বৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। এ সময় আকলিমার সঙ্গে তার সহযোগী একই গ্রামের রোকন আহমদ, তোতা মিয়া, ছন্দন মিয়া, হারুন মিয়া ও শাহজাহান আহমদ ছিলেন। পরে তাদের প্রস্তাবে মশাহিদকে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে পাঠানোর চুক্তি হয়। এরপর তারা মশাহিদের পাসপোর্ট ও প্রথম কিস্তির সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেন।

সংবাদ সম্মেলনে সানোয়ারা বেগম আরও জানান, এরপর ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তার স্বামীকে প্রথমে দুবাই পাঠানো হয়। দুবাই থেকে লিবিয়ায় পাঠানোর পর নেওয়া হয় আরও ৩ লাখ টাকা। এরপর শুরু হয় মশাহিদের ওপর নির্যাতন। তাকে জিম্মি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং খুন করে লাশ সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয় ২২ লাখ টাকা। এরপর দাবি করা হয় আরও ১৬ লাখ টাকা। ২১ জুন মানব পাচার চক্রের সদস্য শাহীন লিবিয়া থেকে ইমু অ্যাপসের মাধ্যমে ফোন করে জানায়, মুক্তিপণের ১৬ লাখ টাকা না দেওয়ায় চক্রের সদস্যরা নির্যাতন করে মশাহিদকে মেরে ফেলেছে।

সানোয়ারা অভিযোগ করেন, এরপর তিনি শাহীনের স্ত্রী আকলিমা ও সহযোগীদের কাছে তার স্বামীকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় হলেও ফেরত চান। কিন্তু তারা উল্টো এ নিয়ে কথা বললে সন্তানসহ তাকে অপহরণ, খুন ও গুমের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতা রয়েছেন। এ বিষয়ে দিরাই থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানাপুলিশও মামলা নেয়নি।

সানোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে তার স্বামীকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ফেরত পেতে এবং মানব পাচারে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর