বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সন্তান কোলে নিয়ে ভারতীয় স্বামীর খোঁজে বাংলাদেশি নারী

কলকাতা প্রতিনিধি

এক বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশে স্বামীর খোঁজে ছুটে এলেন বাংলাদেশি নারী। তার ইচ্ছা, জীবনের বাকি দিনগুলো স্বামীর সঙ্গেই কাটাবেন। সোনিয়া আক্তার নামে ওই বাংলাদেশি নারী আট দিন ধরে নয়ডায় অবস্থান করছেন। তার দাবি, নয়ডার বাসিন্দা সৌরভ কান্ত তিওয়ারি কর্মসূত্রে বাংলাদেশ থাকাকালে তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু সোনিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে রাজি নন সৌরভ। জানা গেছে, তিন বছর আগে কর্মসূত্রে বাংলাদেশে যান নয়ডার সৌরভ। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন তিনি। তখনই পরিচয় হয় সোনিয়ার সঙ্গে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী দুজনের বিয়ে হয়। সৌরভ নিজের হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। অভিযোগ রয়েছে, স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পরই ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে নয়ডায় চলে আসেন সৌরভ। যদিও কাজ সেরে ফের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল তিনি। কিন্তু পূর্বকথামতো ঢাকায় ফিরে না যাওয়ার কারণে সৌরভের মোবাইলে ফোন করতে থাকেন সোনিয়া। যদিও ওই ফোন ‘আনরিচেবল’ বলা হয়। এর পরই ভিসা নিয়ে ভারতে আসার পরিকল্পনা নেন সোনিয়া। সন্তানসহ সোনিয়াকে পাঠানো হয়েছে নয়ডার সেক্টর-৬২ এলাকায় একটি ডিটেনশন সেন্টারে। ইতোমধ্যে নয়ডা পুলিশ কমিশনারেটের উইমেন সেলের তরফে সৌরভ ও সোনিয়ার মধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

এদিকে সোমবার নয়ডার স্থানীয় একটি থানায় সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সোনিয়া জানিয়েছেন, সৌরভ তাকে ত্যাগ করে অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সংসার করছেন। সেই পক্ষের দুটি সন্তানও রয়েছে সৌরভের। বিষয়টিতে পুলিশের হস্তক্ষেপ চেয়ে সোনিয়া জানান, ‘আমার নাম সোনিয়া আক্তার। আমি একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তিন বছর আগে সৌরভ ও আমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। আমি চাই আমার স্বামী আমাকে এবং আমার সন্তানকে গ্রহণ করুক।’

সোনিয়া আরও জানান, ‘আমি আমার জীবনের বাকি দিনগুলো স্বামীর সঙ্গে থাকতে চেয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছি। আমাদের একটা ছোট্ট সন্তান আছে। কিন্তু সৌরভ আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ বাংলাদেশি ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তর প্রদেশের পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সোনিয়ার বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখছে পুলিশ।

নয়ডার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) আনন্দ কুলকার্নি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা এক নারীর দায়ের করা একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্তের জন্য সেই অভিযোগটি ইতোমধ্যে রাজ্যের নারী ও শিশু সুরক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’ ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ওই বাংলাদেশি নারী সন্তান নিয়ে ভারতে এসেছেন। ভিসা সম্পর্কিত সব তথ্যই আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যেখানে তাদের বিয়ে হয়েছিল সেসব নথিও জমা পড়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এর সত্যতাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, দেড় মাস আগেই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সীমা হায়দার নামে এক পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করে নয়ডার পুলিশ। জানা যায়, ২০২০ সালে পাবজি গেমের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক শচীন মিনার সঙ্গে পরিচয় হয় পাকিস্তানি নারী সীমা হায়দারের। এরপর প্রেম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুজনের যোগাযোগ শুরু হয়। ভারতীয় প্রেমিকের টানে চার সন্তানকে (যাদের সবারই বয়স সাত বছরের নিচে) নিয়ে ১৫ মে অবৈধভাবে নেপাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন সীমা। পরে জুন মাসে সীমাকে বিয়ে করেন শচীন। এরপর অত্যন্ত গোপনে গ্রেটার নয়ডার রাবুপুরা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা। পরে অনুপ্রবেশের অভিযোগের সীমা এবং তাকে সহায়তা করার অভিযোগে শচীনকে ৪ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় আদালতের নির্দেশে জেল-জরিমানাও হয় তাদের। যদিও ৭ জুলাই আদালতের নির্দেশে জামিন পান তারা। কিন্তু এরই মধ্যে অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইর হয়ে ভারতে এসেছেন সীমা হায়দার। গোটা বিষয়টি সামনে আসার পরই আলাদাভাবে তদন্তে নামে নয়ডা পুলিশ ও সন্ত্রাস দমন শাখা। তবে ভারতীয় নাগরিক শচীন মিনা পাকিস্তানি নারী সীমা হায়দারকে গ্রহণ করলেও নয়ডার বাসিন্দা সৌরভ ও বাংলাদেশি নারী সোনিয়ার মধ্যে কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল কি না, বা থাকলেও সোনিয়াকে স্ত্রী হিসেবে সৌরভ মেনে নেবেন কি না তা এখন সময়ই বলে দেবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর