শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুতা সংকটে বন্ধ হচ্ছে দেশি তাঁতশিল্প

চেয়ারম্যানের কার্যালয় ঘেরাও কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে তিন ব্যক্তির এক সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কৌশলে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় সারা দেশে দেশি তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে। বন্ধ হয়ে গেছে ৬০ ভাগের বেশি তাঁত। শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি কৌশলে সাধারণ তাঁতীদের জন্য সুতা আমদানি বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিজেরা এলসির মাধ্যমে ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার তাঁতী সমিতির নেতারা বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি। আগামীকাল সংকট সমাধানে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয় ঘেরাও করবেন তারা। বিভিন্ন এলাকার তাঁতী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্যে সুতা না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন ১ হাজার ৩৫০ তাঁতী সমিতির লাখ লাখ তাঁতী। সরকার নির্ধারিত রেয়াতি দামে সুতা আমদানির জন্য কয়েক শ তাঁতী সমিতির আবেদন তাঁত বোর্ডে জমা পড়লেও তাদের দুই বছরের অধিক সময় ধরেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেনের কার্যালয়ের সামনে প্রায় দিনভর বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন জেলার কয়েক শ তাঁতী সমিতির নেতৃবৃন্দ। সেখানে তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে সিন্ডিকেটের সদস্যদের নাম ধরে ধরে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন টাঙ্গাইলের কোকডহুরা ইউনিয়ন সমিতির সভাপতি রাশিদুল হক, হুগরা ইউনিয়ন সমিতির সভাপতি মো. রুবেল হোসেন, সিরাজগঞ্জের খুকনী সমিতির সম্পাদক মো. নুরুল আমিন, টাঙ্গাইলের কোকডহুরা ইউনিয়ন সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম, নরসিংদীর ডাঙ্গা ইউনিয়ন তাঁতী সমিতির সভাপতি আবু সাইদ, ডাঙ্গা ইউনিয়ন সমিতির সভাপতি মোছা. ইতি আক্তার, সিরাজগঞ্জের পোরজনা ইউনিয়ন সমিতির সভাপতি মো. আজাহার আলী প্রমুখ। দেশের বিভিন্ন এলাকার তাঁতী সমিতির নেতাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অনুসারে, অবৈধভাবে নিয়োগকৃত জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মনোয়ার হোসেন, তাঁত বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) কামনাশীষ দাশের নেতৃত্বে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর একজন স্টাফ এ সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। অথচ তাঁত বোর্ডের সুস্পষ্ট বিধান থাকার পরও বোর্ডে চার বছর ধরে তাঁতীদের কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে ২৫ লাখ দেশি তাঁতের মধ্যে ১৫ লাখই এখন বন্ধ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সরাসরি লঙ্ঘন করে তাঁত বোর্ডের এই সুবিধাভোগীরা গত চার বছরে এ খাত থেকে শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন। ফলে সুতা আমদানি করতে না পেরে বিভিন্ন এলাকার অর্ধ কোটি তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সারা দেশে তাঁতশিল্প বন্ধ হওয়ার পেছনে তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহেলা, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনিয়মকে দায়ী করা হচ্ছে তাঁতী সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে। দেশি তাঁত বন্ধ রেখে পরোক্ষভাবে কটন মিলগুলোকে ব্যাপক বাণিজ্যের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি নতুন জয়েন করেছি। তাঁতী সমিতির নেতারা আমার কছে এসেছিলেন। অভিযোগের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছি।’

তাঁতী সমিতির অভিযোগে জানা গেছে, টানা চার বছর ধরে কোনোরকমের নির্বাচন ছাড়াই অবৈধভাবে নিয়োগকৃত জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ১০ বছর ধরে একই পদে থাকা তাঁত বোর্ডের জিএম কামনাশীষ দাশের নেতৃত্বে এ সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। কামনাশীষ দাশ জেনারেল ম্যানেজারের পদে ১০ বছর ধরে অবস্থান করার পাশাপাশি তাঁত বোর্ডের অধীন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আর জাতীয় তাঁত বোর্ডের সভাপতি মনোয়ার হোসেন নির্বাচন ছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে পরপর দুবার (চার বছর) সমিতির সভাপতির পদ দখল করে আছেন।

জানা গেছে, অতি সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নরসিংদীর একটি তাঁত সমিতিকে বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু জিএম কামনাশীষ দাশ নানা কারসাজির মাধ্যমে সেটিও কয়েক দিন আগে বাতিল করে দিয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের আওতায় সম্প্রতি ২৩টি ভুয়া সমিতির নামে রেয়াতি শুল্কে সুতা আমদানির এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে; যা গত বৃহস্পতিবার তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে কয়েক শ তাঁতী সমিতির নেতা সশরীরে গিয়ে অভিযোগ করে এসেছেন। তাঁরা মনোয়ার হোসেন ও কামনাশীষ দাশকে স্ব স্ব পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর