রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

শঙ্কা জাগিয়ে বাড়ছে পানি

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর সড়ক

প্রতিদিন ডেস্ক

শঙ্কা জাগিয়ে বাড়ছে পানি

রংপুরে বসতভিটায় উঠেছে বন্যার পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে চলেছে। এরই মধ্যে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে। এতে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে এবং এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে আবারও ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল দুপুর ১২টায় স্থানীয় পাউবো জানায়, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে অন্যান্য নদনদীর পানি কিছুটা ওঠানামা করে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। ফলে নদনদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসমূহে পানি উঠে মানুষজন বন্যা পরিস্থিতিতে পতিত হয়েছেন। জেলার অধিকাংশ নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে রাজারহাট উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী মানুষগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়েছেন।

রংপুর : ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ৪০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক ডুবে গেছে চরের আমন ও শাক-সবজির খেত। অনেকে গবাদি পশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া উজানের ঢলে ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়ার নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চর নোহালী, বৈরাতি, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চর, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই, গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া ও তালুক শাহবাজপুর, টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই, হরিচরন শর্মা, বিশ্বনাথ চর, আজমখাঁ চর, টাপুর চর, হয়বৎ খা, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের হাগুড়িয়া হাশিম, শিবদেব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট : তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি আবারও বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নদী তীরবর্তী চর অঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে আমন খেত। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ। গতকাল সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে সকাল ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সিরাজগঞ্জে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি    -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিরাজগঞ্জ : টানা বর্ষণের কারণে গত দুই দিন যাবত যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ফের বাড়তে শুরু করেছে। উজানে ভারী বর্ষণের ফলে পানি বাড়লেও ভারী বন্যার শঙ্কা নেই বলে পাউবো বলছে। এদিকে, পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও এনায়েতপুরে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৪৪ মিটার।

২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল (বিপৎসীমা-১২ দশমিক ৯০ মিটার)। তিনি আরও জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী তিনদিন পানি বাড়বে, বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবারও ভারী কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর