রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মোস্তফা মতিহার

কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রিয়ার প্রতি ভালোবাসার ব্যাকুলতা প্রকাশের পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাব্যের পঙ্ক্তিতে জ্বালিয়েছেন দ্রোহের আগুন। যেমন লিখেছিলেন ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য’, ঠিক তেমনিভাবে লিখেছিলেন ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল।’ তিনি দ্রোহ ও প্রেমের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর হাত ধরেই এ দেশের সাহিত্য ও সংগীতাঙ্গন উন্নীত হয় সুউচ্চ মর্যাদার আসনে। আজ ১২ ভাদ্র ‘বিদ্রোহী কবি’খ্যাত কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ১৩৮৩ সালের (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/ যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’- মৃত্যুর পর কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। কবি নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক। বাংলা সাহিত্যর এই অনন্য রূপকার কবিতার পাশাপাশি সংগীতেও ছিলেন অনন্য। শুধু কলমেই দ্রোহের আগুন জ্বালাননি, দেশমাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধও করেছেন সৈনিক কবি। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর পেশা হিসেবে তিনি বেছে নেন সাংবাদিকতা। নিজের লেখনীর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন আজীবন আপসহীন কবি। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সৃষ্টি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার পর কবিকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন রাজবন্দি হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালতে দেওয়া ওই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ সাহিত্য মর্যাদা লাভ করেছে। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি রচনা করেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। বন্দিদশায় তাঁর হাতে সৃষ্টি হয়েছে গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্পসহ অসংখ্য রচনা। আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নজরুল যখন বন্দি ছিলেন তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর বসন্ত গীতিনাট্য প্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারানোর আগ পর্যন্ত তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন।

১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্যজগতে নতুন দিনের সূচনা হয়, নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল। সাহিত্যের সব সৃজনশীলতাকে ছড়িয়ে সংগীতেও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রাখেন জাতীয় কবি। প্রায় ৪ হাজার গান রচনা ও সুর করে এ দেশের সংগীতাঙ্গনের জন্য এনেছেন বিরল সম্মান ও খ্যাতি। ভারত সরকারের সম্মতিতে ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে এনে তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।

কর্মসূচি : জাতীয় কবির ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও আলোচনা সভা। সন্ধ্যা ৬টায় ছায়ানট আয়োজন করেছে কবির ভক্তি ও রসের গান নিয়ে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান। এ ছাড়া নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নজরুলবিষয়ক আলোচনা, কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি, নজরুল সংগীত, নাচসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

সর্বশেষ খবর