সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চতুর্মুখী সংকটে পোশাক খাত

আট মাসে বন্ধ ৩১৩ কারখানা, টাকার অবমূল্যায়ন খরচ বৃদ্ধিতে কমে গেছে অর্ডার

শাহেদ আলী ইরশাদ

চতুর্মুখী সংকটে পোশাক খাত

টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক চাহিদা কমার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সমস্যায় দেশি-বিদেশি বাজারের জন্য পণ্য উৎপাদনকারী অনেক তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টাকার অবমূল্যায়ন ও ক্রয়াদেশ কমার এই সমস্যা ছাড়াও উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেই কারখানাগুলো বন্ধের প্রধান কারণ ব্যাংকিং জটিলতা। সূত্র জানায়, বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি। রপ্তানিকারকদের মতে, মুদ্রা বিনিময় হারের ব্যবধানের ক্ষতির কারণে ভালো রপ্তানিকারকরাও টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন।

শিল্পপুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিল্পপুলিশ-এলাকার ৩১৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে ৬০টি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য, ১৬টি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য, ৯টি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সদস্য এবং পাঁচটি বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সদস্য। বাকি ২২৩টির বেশির ভাগই কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠান (নন-আরএমজি)।

 

বন্ধ পোশাক কারখানাগুলোতে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী কাজ করতেন। বিজিএমইএর সদস্য ৬০টি কারখানায় কাজ করতেন ১৬ হাজার ৯৪৩ জন কর্মী। আর নন-আরএমজি কারখানাগুলোতে নিযুক্ত ছিলেন ১৬ হাজার ১৭৩ জন কর্মী। তবে সুখবর হচ্ছে, এই সময়ে ১১৪টি নতুন কারখানা চালু হয়েছে। সেখানে নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ জন শ্রমিকের। শিল্পপুলিশের তথ্যমতে, কারখানা চালু করার জন্য ৬০টি কারখানায় প্রায় ১০ হাজার কর্মী পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৮টি তৈরি পোশাক খাতের এবং ২২টি টেক্সটাইল খাতের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্রয়াদেশ না থাকায় বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দেরিতে ঋণপত্র খোলা, সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কিছু কারখানা। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, টাকা ও ডলারের বিনিময় হারের আকাশ-পাতাল ব্যবধানের ক্ষতির কারণে অনেক ছোট ছোট কারখানা টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, পোশাক কারখানার ১৪ শতাংশের বেশি ব্যাংক খেলাপি ছিল। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর বিকেএমইএর প্রায় ১০০ সদস্য তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেননি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল আট শর মতো। তারা এখন ব্যবসা করছেন না। বিটিএমইএর নেতারা বন্ধ পোশাক কারখানার সংখ্যা উল্লেখ না করে বলেন, কিছু কারখানা গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে চালু রাখতে পারেনি। এ ছাড়া বৈশ্বিক সংকটে কাঁচামাল আমদানির জন্য সময়মতো ঋণপত্র খুলতে পারেনি কেউ কেউ। গ্যাসের ঘাটতি, ডলার সংকট, পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় ঈদের পর অনেক কারখানা চালু করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন মালিক। এক বছরে চামড়া খাতের কিছু কারখানা বন্ধের কথা স্বীকার করে লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি সায়ফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম কমার পাশাপাশি চাহিদাও কমে গেছে। ফলে লাভও কমে গেছে। বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, কিছু মিল সম্পূর্ণভাবে চালু নেই। কিন্তু ব্যাংক ঋণ নেওয়ার কারণে কিছু কারখানা আংশিকভাবে চলছে। নীতি সহায়তার অভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হচ্ছে। আর্থিক সংকটের কারণে মিল মালিকরা পাট কিনতে পারছেন না। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় আগামী ছয় মাস দেশের পোশাকশিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। কারণ জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদ্যমান প্রধান বাজারগুলো থেকে দেশের রপ্তানি গত অর্থবছর কমে গেছে। বাংলাদেশের শীর্ষ পোশাক রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯০১ কোটি ডলার থেকে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ৮৫১ কোটি          ডলারে দাঁড়িয়েছে।

সর্বশেষ খবর