সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙন আতঙ্কে মানুষ

তিস্তার প্রবল স্রোতে স্পার বাঁধের ৩০ মিটারে ধস, বন্যা অপরিবর্তিত

প্রতিদিন ডেস্ক

ভাঙন আতঙ্কে মানুষ

তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে বাম তীরের স্পার বাঁধের ৩০ মিটারে ধস নেমেছে। এতে করে তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে তিস্তা নদীর পানি কমে এখনো বিপৎসীমার অনেকটা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদনদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো জানিয়েছে, গতকাল       বিকাল ৩টায় তিস্তার পানি কিছুটা কমে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটিার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া দুধকুমার ও ধরলা নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি এসেছে। ফলে নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চলের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেকের ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় বের হতে পারছেন না। এদিকে তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের বুড়িরহাটে তিস্তার বাম তীরের স্পার বাঁধের একাধিক স্থানে ধস দেখা দেওয়ায় শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠে বন্যাপরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রংপুর :  রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে শনিবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় তৈরি হওয়া বন্যাপরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল দুপুরে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে তিস্তা নদীর তীরবর্তী কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই, গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া ও তালুক শাহবাজপুর, টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই, হরিচরণ শর্মা, বিশ্বনাথ চর, আজমখাঁ চর, টাপুর চর, হয়বৎ খাঁ, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের হাগুড়িয়া হাশিম, শিবদেব এলাকার সহস্রাধিক পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে।

লালমনিরহাট : তিস্তার পানি কমে লালমনিরহাটে সৃষ্ট বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বানভাসি  মানুষের ভোগান্তি  কমেনি। চরের রাস্তাঘাট ভেঙে দুর্ভোগ তৈরি হয়ছে। জেগে ওঠা রাস্তায় জমে আছে কাদামাটি। ফলে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। কিছুটা উঁচু বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেলেও ঘরে-বাইরে জমে আছে কাদামাটি। ফলে তাদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় তলিয়ে থাকা খেত থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ফের বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরে নদী তীরবর্তী এলাকায় যেমন ভাঙন দেখা দিয়েছে তেমনি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় পানি বাড়ায় আবাদি জমি প্লাবিত হয়ে আছে। কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জানান, কয়েকদিন আগে পানি কমায় কৃষকরা আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ফের পানি বাড়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আরকান্দি গ্রামের মকবুল হোসেন জানান, পানি বাড়ায় খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামের অনেক বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এসব বাড়িঘরের মানুষ চৌকি উঁচু করে বসবাস করছেন। এ ছাড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু গ্রাম বন্যার পানিতে ভাসছে।

 অনেক রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। এতে দুর্ভোগ পেহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী তিন দিন পানি বাড়বে, বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার ভারী বন্যার আশঙ্কা নেই। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা : কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার সবকটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। বন্যার শঙ্কায় আছেন নদীপাড়ের মানুষ। জেলার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফুলছড়ি উপজেলার কয়েকটি নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিচু এলাকার স্কুল ও ঘরবাড়ি গুলোয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম বলেন, জেলার সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর