সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফের ডুবেছে চট্টগ্রাম

পাহাড় ধসে বাবা-মেয়ের মৃত্যু, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার উৎকণ্ঠা

রেজা মুজাম্মেল ও ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

ফের ডুবেছে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বৃষ্টি হলেই ঘটছে পাহাড় ধসের ঘটনা। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। গতকালও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে এবং এতে পাহাড় ধসে সাত মাসের শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাতিল করা হয় চসিকের কর্মসূচি। স্থগিত হয় চবির ২২ বিভাগের ২৪ পরীক্ষাও।

চট্টগ্রাম আমবাগান আবহাওয়া অফিস শনিবার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। একই সময়ে পতেঙ্গা অফিস রেকর্ড করে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। এ বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগর। তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

এভাবে চলতি বছরে নগর ডুবেছে অন্তত ১০ বার। টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর কালুরঘাটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ‘নলেজ পার্কের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের একটি কর্মসূচি বাতিল করা হয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ সময়  পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে আজ থেকে বৃষ্টি কমতে পারে। ৬ থেকে ৯ আগস্ট তলিয়ে ছিল নগর। তিন সপ্তাহ পর গতকাল আবারও অতিবর্ষণে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে নগরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। মূল সড়কের পাশাপাশি উপসড়ক ও গলিতেও পানি জমে গেছে। পানিবন্দি সড়কে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে যানবাহন চলাচল। এ ছাড়া নন্দীর হাট, আমানবাজার, ইসলামীয়া হাটসহ কয়েকটি এলাকার সড়কেও পানি উঠেছে। শনিবার রাতের বৃষ্টিতে নগরের চান্দগাঁও, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মুরাদপুর, ফুলতলা, বাড়ইপাড়া, তিনপোলের মাথা, কাপাসগোলা, হালিশহর, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, কেবি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া, ফরিদারপাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুরপাড়, মুরাদপুরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও অলি-গলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।  

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, বৃষ্টি এবং জোয়ার একসঙ্গে হওয়ায় অনেক এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পরে পানি ধীরে ধীরে নেমে যায়। তাছাড়া, যেসব ড্রেন-নালায় পানি আটকে আছে সেগুলো দিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কম সময়ের ব্যবধানে আরেকটি জলাবদ্ধতা হওয়ায় মানুষের কষ্টটা একটু বাড়ছে।   

পাহাড় ধসে বাবা-মেয়ের মৃত্যু : চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর আইডব্লিউ কলোনিতে পাহাড় ধসে সাত মাস বয়সী মেয়ে বিবি জান্নাত ও বাবা মো. সোহলের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটির কারণে এলাকায় বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, আইডব্লিউ কলোনির পাহাড়টি প্রায় ৫০ ফুট উঁচু, সেখানে রিটেইনিং ওয়ালও আছে। পাহাড়ের নিচে কাঁচা ঘর বানিয়ে নিম্নআয়ের লোকজন থাকতেন। গতকাল সকালে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় থেকে মাটি ধসে নিচে ঘরের ওপর পড়ে। তাতে একই পরিবারের চারজন চাপা পড়লে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আখতারুজ্জামান বলেছেন, পাহাড় ধসের পর চারজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অপর দুজন এখন চিকিৎসাধীন। নিহতদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এক ঘণ্টা পিছিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা : জলাবদ্ধতার কারণে পূর্ব নির্ধারিত এইচএসসি পরীক্ষা এক ঘণ্টা পর শুরু হয়। চট্টগ্রামসহ তিন বোর্ডের প্রথম চারটি পরীক্ষা জলাবদ্ধতার কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। গতকাল যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটুপানি মাড়িয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে আসতে হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষানিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। তাই পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে গতকাল মহানগরের ২৭টি এবং হাটহাজীর দুটি কেন্দ্রের পরীক্ষা ১০টার পরিবর্তে ১১টায় শুরু করা হয়। নগরের বাকলিয়া এলাকা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া সাইফুদ্দীন বলেন, বাসার মুখে এক হাঁটু পানি, বৃষ্টিও পড়ছে। আগের দিন বৃষ্টি না হলেও আজকের বৃষ্টিতে বের হওয়া মুশকিল। এমতাবস্থায় হাঁটুপানি বেয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি। আগে বাসা থেকে চকবাজার রিকশা ভাড়া ৩০ টাকা নিলেও এখন দাবি করছে ১০০ টাকা। বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।

চবির ২২ বিভাগের ২৪ পরীক্ষা স্থগিত : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনসহ অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগের ২৪টি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া পাহাড় ধস নিয়ে সতর্ক থাকতে ক্যাম্পাসে অবস্থিত কলোনিগুলোতে মাইকিং করেছে চবি প্রশাসন। তবে চারুকলা ইনস্টিটিউট ও ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানা গেছে, ভারী বর্ষণে পুরোপুরি তলিয়ে যায় চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ স্টেশন। এ কারণে গতকাল শহর থেকে কোনো শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে যায়নি। অন্যদিকে বৃষ্টিপাতে হাটহাজারীর নন্দীরহাট প্লাবিত হওয়ায় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ। এতে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ইতিহাস, দর্শন, নৃবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, রসায়ন, সমুদ্রবিজ্ঞান, পালি, ইসলামিক স্টাডিজ, ইংরেজি, সংস্কৃত, শিক্ষা ও গবেষণা, আরবি, মার্কেটিং, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মনোবিজ্ঞান, অ্যাকাউন্টিং, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, ফাইন্যান্স, উদ্ভিদবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বাস চলাচল করতে পারেনি। কয়েকটি বাস বের হলেও প্রতিকূলতা পোহাতে হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষানিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা বলেন, গতকাল ২৫টি বিভাগের পরীক্ষা ছিল, এর মধ্যে ২২টি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে স্ব স্ব বিভাগ তাদের সুবিধা অনুযায়ী পরীক্ষা নেবে।

সর্বশেষ খবর