শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেসরকারি সংস্থায় ৩০ শতাংশ কমেছে বিদেশি অনুদান

শাহেদ আলী ইরশাদ

দেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) বিদেশি অনুদান কমে গেছে। বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি দাতারা ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল বাড়ানোর কারণে অনুদান কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭২ কোটি ডলারের বিদেশি অনুদান এসেছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশি অনুদান এসেছিল ১০৩ কোটি ডলার। একই সঙ্গে অনুদান প্রাপ্তির পরিমাণও কমে গেছে ১০ শতাংশের মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনজিওগুলো মোট ৭৪ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছিল। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৮২ কোটি ১০ লাখ ডলার। উল্লেখযোগ্য, জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থাগুলো ছাড়া বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে অনুদানের জন্য এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞ এবং খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে দাতারা স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে তাদের অনুদান যে সব দেশে সাহায্য প্রয়োজন সে সব দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন। যার মধ্যে অন্যতম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীরা। দাতাদের অনুদান সরিয়ে নেওয়ার এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও। যেমন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছিল। তখন অনেক অনুদান এসেছিল দেশে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কাজ করে আসছে। বিশেষ করে গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এসব সংস্থার ভূমিকা কম নয়। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হওয়ার পর দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশিদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলারের বেশি। খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন খাতে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে এনজিওতে বিদেশি অনুদান কমে যাচ্ছে। দাতারা ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন করবে। বাংলাদেশি এনজিওগুলো বর্তমানে মানবিক সহায়তার পরিবর্তে প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য তহবিল সুরক্ষিত করছে। প্রযুক্তিগত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদানের পরিমাণ একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচির ২৫ শতাংশের মতো কম থাকে। তাদের মতে, স্থানীয় এনজিওদের এখন দেশের জন্য তাদের উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টা টিকিয়ে রাখতে তাদের সামাজিক উদ্যোগ শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো ২ হাজার সাতটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৪টি কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৬১টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, ২৬৭টি বিদেশি সংস্থাসহ প্রায় ২ হাজার ৫০০টি এনজিও দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উন্নয়নকর্মী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখায় দাতারা আফ্রিকার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দিকে ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের দৃষ্টি দিচ্ছেন। এছাড়াও অনেক দেশ জরুরি মানবিক প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত থেকে উদ্ভূত শরণার্থীরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় দাতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট তহবিল পেত। চলমান পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোও অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে লড়াই করছে, যা স্বাভাবিকভাবেই তাদের দাতব্য কার্যক্রম হ্রাস করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর