শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত নতুন এলাকা, ভাঙছে নদী

বান্দরবানে ভেসে যাওয়া মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার

প্রতিদিন ডেস্ক

পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত নতুন এলাকা, ভাঙছে নদী

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। দুর্ভোগে পড়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। জামালপুর থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের সবকটি নদনদীর পানি ওঠানামা করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দেশের বেশির ভাগ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এবার উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণের বেশির ভাগ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। যমুনার ভাঙনের শিকার হয়েছে দেড় শতাধিক বাড়িঘর। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

কুড়িগ্রাম : ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে প্রতিদিন নদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে কমছে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি। যা গত কয়েকদিন ধরে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন তা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বিকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ১৬ সে.মি, চিলমারী পয়েন্টে ২ সে.মি নিচ দিয়ে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৫২ সে.মি এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ২৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়ায় বেড়েই চলছে যমুনা নদীর পানি। এতে ভাঙনের শিকার হয়েছে দেড় শতাধিক বাড়িঘর। বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের চরাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। ঢলের পানির স্রোতে একটি স্পার বাঁধের প্রায় ২০ মিটার ধসে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, বোহাইল, কাজলা, চন্দনবাইশা, সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও কামালপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২২টি চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝঁকিপূর্ণ কামালপুর ও হাটশেরপুর ইউনিয়ন। বন্যার পানিতে সোনাতলা উপজেলার তেকানী-চুকাইনগর ও পাকুল্ল্যা ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে তেকানিচুকাইনগর, ভিগনেরপাড়া, চরসরলিয়া, খাবুলিয়া, খাটিয়ামারি, রাধাকান্তপুর, আচারেরপাড়া ও পূর্বসুজাইতপুর।

গাইবান্ধা : জেলার তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি কমছে। পক্ষান্তেরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র। বেড়েছে শহরের অভ্যন্তরীণ ঘাঘট নদীর পানি। শুক্রবার বিকাল ৩ টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ : পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তলিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমির ফসল, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাঁত কারখানা। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে নদী তীরের ফসলি জমি ও বসতভিটা। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

জামালপুর : জামালপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরামসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের জমি। জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বরিশাল : বিভাগের নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থা। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভোলার তজুমদ্দিনে মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং এই দুই নদীর পানি দৌলতখান উপজেলায় বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া বিষখালী নদীর পানি বরগুনা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পাথরঘাটা পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝালকাঠি পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার এবং বেতাগী পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বান্দরবানে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার : বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ঝিরি পারাপারের সময় পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভেসে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয়রা মেয়ে ১৬ বছর বয়সী মানু খেয়াংয়ের লাশ উদ্ধার করলেও নিখোঁজ ছিলেন মা মাহ্লা খেয়াং (৪২)। গতকাল সকালে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস অভিযান চালিয়ে তৈছা খাল থেকে মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়নের ক্রংলাই পাড়ার বাসিন্দা।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জুমের কাজ শেষ করে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে তৈছা খাল পারাপারের সময় পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় মা ও মেয়ে। এসময় স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজির পর মেয়ের লাশ উদ্ধার করলেও নিখোঁজ ছিলেন মা। গতকাল সকালে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস অভিযান চালিয়ে তৈছা খাল থেকে মায়ের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় মা মাহ্লা খেয়াংয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর