শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

খাদ্য সংকটে যৌনকর্মীরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনের পর থেকে শুরু হয়েছে যৌনকর্মীদের মানবেতর জীবন। এরপর পদ্মা সেতু চালুর পর পল্লীতে শুরু হয়েছে হাহাকার। খদ্দেরের অভাবে জীবিকা সংকটে দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীরা। সবচেয়ে বেশি কষ্টে জীবনযাপন করছেন ৫০ বছরের ঊর্ধ্বের নারীরা। জানা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৫০ জন নিয়মিত রয়েছে। বাকিরা অনিয়মিত থাকেন এখানে। এখানে প্রায় ৩০০ বাড়ি রয়েছে। যৌনপল্লীতে শিশুর সংখ্যা ৬০০। পল্লীতে বর্তমানে ৩৫০ জন বয়স্ক নারী রয়েছেন। গতকাল দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, এখন আর সেই আগের মতো ভিড় নেই পল্লীর ভিতরে। সুনসান নীরবতা চারদিকে। একসময় পল্লীর প্রধান গলিতে ভিড় লেগে থাকলেও সেই গলি অনেকটাই ফাঁকা। খদ্দেরের আশায় নারীরা সেজে ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এখন আর খদ্দের সেভাবে আসে না বলে জানান বেশ কয়েকজন যৌনকর্মী। কথা হয় যৌনকর্মী ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন তারিখ মনে নেই কবে আসছিলাম। তবে শুধু মনে আছে যেদিন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় সেদিন এখানে আমার আসা। আমার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। তারা এই জগৎ থেকে অনেক দূরে। আমি একাই পল্লীতে আছি। আমার বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। পল্লীর ভিতরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। কাজের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই। যৌনকর্মী ছন্দা (৫৭)। তিনি বলেন, পল্লীর অবস্থা একসময় ভালো ছিল। বর্তমানে পল্লীর অবস্থা খুব খারাপ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে লোকজন আসে না। সবাই পদ্মা সেতু হয়ে যায়। তাই আমাদের হাহাকার শুরু হয়েছে। আমরা এখন চলে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নাই। সরকার যদি আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে বেঁচে থাকতে পারব। পল্লীর আরেক বাসিন্দা বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যখন যানজট লেগে থাকত তখন ভালো ছিলাম। খদ্দের আসত পল্লীতে। কিন্তু এখন কেউ খবর নেয় না। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই। সরকার যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকার জায়গা করে দিত আমরা চলে যেতাম। দৌলতদিয়ার পল্লীর ভিতরে রয়েছে অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি ঝুমুর বেগম। তিনি বলেন, পল্লীর মধ্যে ৩৫০ জন বয়স্ক নারী আছেন। এদের চরম খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। এরা এখন চলে যেতে চায়। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন স্যার আসছিলেন। তিনি বলেছেন, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছেন তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লী। পদ্মা সেতুর চালুর পর এখানে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আমি সরেজমিন সেখানে গিয়েছিলাম। যৌনপল্লীর সবাই আমাদের সমাজের অংশ। সেখানে কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি- ৫০ বছরের ওপরে কতজন নারী এখানে আছেন। প্রাথমিকভাবে এ তালিকা প্রস্তুত করে আমরা চিন্তাভাবনা করব তাদের কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর