মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তলব ১৩ ব্যাংককে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা বিধিনিষেধ থাকার পরও ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমতো ডলারের দর নির্ধারণ করে বাণিজ্য করছে। অভিযোগ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনাবেচা করছে একাধিক ব্যাংক।

এদিকে ডলার সংকটকে পুঁজি করে বেশি দামে বিক্রির দায়ে ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বেচাকেনায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শরিয়াহভিত্তিক একটি ব্যাংকসহ বাকিগুলো বেসরকারি খাতের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, নির্দেশনার বাইরে বেশি দরে ডলার বিক্রির ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে। এ চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গত আগস্টে আমদানিতে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দর নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও কিছু ব্যাংক ১১৭ টাকা পর্যন্ত দামে ডলার বিক্রি করেছে এবং কিনেছে ১১৬ টাকায়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস এবং বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ থেকে ডলার কেনাবেচা পরিদর্শন করে থাকে। সম্প্রতি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিদর্শনে পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর তথ্য সংগ্রহ করে ডলার বেচাকেনার বিষয়গুলো যাচাই করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগে ১২ ব্যাংকের লাভের অর্থ থেকে ৫০০ কোটি টাকা সিএসআর খাতে ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই তালিকায় বিদেশি মালিকানার দুটি ও বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংক ছিল।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সংকটের শুরু হলে কয়েকদিনের ব্যবধানে ৩০ থেকে ৩২ টাকা পর্যন্ত ডলারের দর ওপরে উঠে যায়। ৮৬ থেক ৮৮ টাকার ডলারের দর ১২০ টাকায় পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডলার নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য শুরু করে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। ব্যাংকারদের অনেকে বলছেন, ডলারের দর বাজারভিত্তিক বলা হলেও মূলত এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ঠিক করে দেয়। এবিবি ও বাফেদা শুধু ঘোষণা করে। নির্ধারিত ডলার কেনার দর সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। এ দামে ডলার পাওয়া যায় না। কারণ এখন হুন্ডিতে ডলারের রেট ১১৭ টাকার মতো। যার ফলে প্রবাসীরা ব্যাংকে না পাঠিয়ে হুন্ডিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

বেশি দামে ডলার বেচাকেনার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানিয়েছেন, নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করার অপরাধে সাতটি মানি চেঞ্জারের ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় আরও ১০ মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতেও তদারকি চলছে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর