বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ঝুড়ির মোয়া

দিনাজপুর প্রতিনিধি

হারিয়ে যাচ্ছে ঝুড়ির মোয়া

এক সময় দিনাজপুরের বিরলের মাটিয়ান ও নলদিঘী গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা মিলত এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ঝুড়ির মোয়া (নাড়ু) বানানোর দৃশ্য। নলদিঘী গ্রাম ঝুড়ির মোয়া তৈরির গ্রাম নামে পরিচিত। বাঙালির ঐতিহ্য ঝুড়ির মোয়া বা নাড়ু সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেসব মোয়া। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি আবার উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে দিনাজপুরের বিরলের দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবার। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আদিকাল থেকে করা এ পেশার মানুষেরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা মনে করেন এটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার খুবই প্রয়োজন। বিরল উপজেলার ধামইড় ইউপির মাটিয়ান গ্রাম ও ফরক্কবাদ ইউপির নলদিঘী গ্রাম দুটির বেশির ভাগ পরিবারের প্রধান কাজ ও আয়ের উৎস এ ঝুড়ির মোয়া তৈরি করে বিক্রি করা। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ এক হয়ে সকালে উঠেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই ঝুড়ির মোয়া তৈরির কাজে। আবদুর রহিমসহ অনেকে জানায়, ঝুড়ির মোয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয় হাতে তৈরি কাঠের ঝরনা মেশিন, আতপ চালের আটা, তেল, গুড়, কড়াই, পাতিল ও খড়ি। প্রথমে আটা সিদ্ধ করে নিয়ে খামির তৈরি করতে হয়। তারপর খামির উত্তমরূপে সংমিশ্রণ করে কাঠের মেশিন বা হাতের সাহায্যে চিকন সিমাইয়ের মতো তৈরি করতে হয় ঝুড়ি। পরে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বালুতে ঝুড়িগুলো মুড়ির মতো করে ভেজে নিতে হয়। এরপর এসব ঝুড়ি গুড়ের বা চিনির সিরা বা গাড় রসে হালকা মেখে নিতে হয়। ঝুড়িগুলো আঠাল হলে তারপর হাতে তেল মেখে নিয়ে ছোট ছোট গোল গোল আকারে তৈরি করা হয় ঝুড়ির মোয়া বা নাড়ু। ওই গ্রাম দুটির নারী-পুরুষসহ পরিবারের প্রায় সবাই এই কাজটি করতে পারে। মোয়া বা নাড়ু তৈরি হয়ে গেলে তা গ্রামে ও শহরে বাজারজাত করা হয়। স্থানীয় সুশীল সমাজের আবদুল কুদ্দুস জানান, বর্তমানে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সে তুলনায় লাভ না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বিরলের এই ঝুড়ির মোয়া। আগের মতো লাভ না হওয়ায় অনেকে এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে বাপ-দাদার আমল থেকে আসা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার কারণে অন্য পেশায় যেতে পারেননি। তাদের অভিযোগ বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগের মতো আর লাভ হচ্ছে না। যা হয় তা দিয়ে পরিবার চলে না। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর