শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজায় আরেক দফা ইসরায়েলি অভিযান

প্রতিদিন ডেস্ক

গাজায় আরেক দফা ইসরায়েলি অভিযান

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আবারও গাজায় ঝটিকা স্থল অভিযান চালিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে সেনারা শুজাইয়া এলাকায় প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ফিরে যায়। এ সময় তাদের সহায়তা করে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন বহর। এ ছাড়া ওই রাতেই ইসরায়েলি বিমানের বোমা বর্ষণে ৪৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি হামাস যোদ্ধারা গতকাল ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থান লক্ষ্য করে ঝাঁক ঝাঁক রকেট আক্রমণ চালিয়েছে। এতে রাজধানী তেল আবিবসহ আক্রান্ত এলাকাগুলো বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়। হামাস বলেছে, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা বন্ধ না করলে তাদের হাতে বন্দি থাকা কোন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়া হবে না, কোনো আলোচনাও হবে না। সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, পার্স টুডে, আল মায়াদিন, প্রেসটিভি।

খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী যে গাজায় স্থল অভিযানে প্রস্তুত তা প্রমাণে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন বহরের ছত্রচ্ছায়ায় তারা গাজার শুজাইয়া এলাকায় প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, অভিযানের সময় তারা হামাসের কয়েক ডজন ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

আরেক খবরে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলায় ৪৮১ জন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে আল আহলি হাসপাতালে বোমা হামলায় ৪৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছিল। ইসরায়েলের বোমায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৭ হাজার ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

হামাসের রকেট বৃষ্টি : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নিরপরাধ মানুষের ওপর ইসরায়েল সরকারের গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে গতকাল তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর অভিমুখে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা গাজা থেকে তেল আবিব, অধিকৃত জেরুজালেম, জাফা এবং ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় আরও কয়েকটি শহরে বৃষ্টিরমতো রকেট নিক্ষেপ করে। খবরে আরও বলা হয়েছে, এসব রকেটের একাংশ ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোমের আঘাতে ধ্বংস হলেও বহু রকেট তেল আবিবসহ অন্যান্য শহরে আঘাত হেনেছে। হামাস এসব রকেট নিক্ষেপ করার পর তেল আবিব, হোলেন, ইলেড, রিশন লেতজিওন, রামাত হাশরন, রামাত গান, বেই দেগান, গেফাতাইন ও কায়ার চাবাদ শহর প্রকম্পিত হয় এবং সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্ক সংকেত হিসেবে সাইরেন বাজতে থাকে। সাইরেনের শব্দ শুনে হাজার হাজার ইসরায়েলি ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যায়। ইসরায়েলের শহরগুলোয় রকেট আঘাত হানার ফলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রচার করেনি তেল আবিব। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, গাজার নিরস্ত্র জনগণের ওপর ইসরাইলের ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব রকেট নিক্ষেপ করেছে।

খবরে বলা হয়, এই ঘটনার পর হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে নেতানিয়াহু সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা যুদ্ধ বন্ধ করারও দাবি জানান। আরেক খবর অনুযায়ী, হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের হাতে জিম্মি থাকা অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি মারা গেছেন। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশেম ব্রিগেডস অবশ্য এ মারা যাওয়াদের মধ্যে কতজন ইসরায়েলি সেনা রয়েছে, তা জানায়নি। হামাস আরও বলেছে, ইসরায়েল নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধ না করলে কোনো বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে না এবং এনিয়ে কোনো মাধ্যমে আলোচনাও হবে না। হামলা বন্ধের শর্তেই কেবর আলোচনা ও মুক্তির প্রশ্ন উঠবে। উল্লেখ্য, ইসরায়েলি বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, হামাসের হাতে সেনাসহ ২২৪ জন বন্দি বা জিম্মি রয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা গত বৃহস্পতিবারের হামলায় তারা ৭ অক্টোবর রকেট হামলার পরিকল্পনাকারী হামাস নেতা শাদি বারুদকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী জানিয়েছে, শাদি বারুদ হামাসের গোয়েন্দা শাখার উপপ্রধান ছিলেন। তাকে ‘সুনির্দিষ্ট বুদ্ধিমত্তার’ যুদ্ধবিমান দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মার্কিন সেনা ঘাঁটি আক্রান্ত : সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আজ-জোর প্রদেশের একটি মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে রকেট আক্রমণের ফলে সেখানে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একই অঞ্চলের দুটি সেনা ঘাঁটিতে মার্কিন বিমান হামলার এক দিন পর গতকাল সকালে এ আক্রমণ চালানো হয়।  একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে লেবাননের আল-মায়াদিন নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সিরিয়ার কনোকো গ্যাস ক্ষেত্রে ওই মার্কিন সেনা ঘাঁটিটি অবস্থিত। ইরাকের জনপ্রিয় হাশদ আশ-শাবি বাহিনীর টেলিগ্রাম চ্যানেল সাবেরিন নিউজ বলেছে, ওই মার্কিন ঘাঁটিতেই রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় এরবিল বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। তবে এসব হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দুটি সেনা ঘাঁটিতে মার্কিন বাহিনী বিমান হামলা চালায়। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে ‘আত্মরক্ষার’ স্বার্থে ওই হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, গত ১৭ অক্টোবর থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলা চালানো হয়। ঘাঁটি দুটি ইরানি সেনাবাহিনী ও ইরান-সমর্থিত গ্রুপগুলো ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার পেন্টাগন জানায়, তাদের ঘাঁটিগুলো ১৬টি হামলার শিকার হয়েছে।

সর্বশেষ খবর