শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
খাজা টাওয়ারে আগুনে তিনজনের মৃত্যু

শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মহাখালীর ১৪ তলা খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ডেটা সেন্টার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি)। এতে সারা দেশের অন্তত ৬০০ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সেবা। যেগুলো এখনো চালু আছে, সেখানেও ইন্টারনেটে ধীরগতি। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বহুতল ভবনেও ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে গতকাল ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি।  কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের                 মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। যদিও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, শর্টসার্কিটে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা ওই ভবনে অবস্থিত পৃথক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে অগ্নিকাে  বিঘ্নিত হওয়া ইন্টারনেট সেবা আজ পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন- বিআইএসপিএ।

গতকাল সংগঠনটির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, খাজা টাওয়ারে আগুনের কারণে দুটি ডেটা সেন্টার ১০ তলায় ঢাকাকোলো এবং ১১ তলায় এনআরবি টেলিকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা ও এর আশপাশের ৬ থেকে ৭ শতাধিক ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এ রিসোর্স ব্যবহার করে। কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমরা তা মূল্যায়ন করছি। খাজা টাওয়ার থেকে সরঞ্জামগুলো অন্য এলাকায় সরানোর চেষ্টা করছি। শনিবার সকাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

জানা গেছে, খাজা টাওয়ারে অবস্থিত রাজধানীর সবচেয়ে বড় ডাটা হাব। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইমো ও ইউটিউব ব্যবহারে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এমনকি অনেকে মোবাইলে কলও যাচ্ছে না। কয়েকবার ডায়াল করার পর কল ঢোকাতে পারছেন কেউ কেউ। বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর ভবন থেকে তার ধরে নামতে গিয়ে ৯ তলা থেকে নিচে পড়ে হাসনা হেনা (২৭) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। পরে আরও দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

তারা হলেন সাইফ পাওয়ার টেক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম (৬৩) এবং রেস অনলাইন লিমিটেডের কর্মী আকলিমা রহমান।

গতকাল তিনজনের লাশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আকলিমার মামাতো ভাই আজিম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় আমাদের ফোন দিয়ে আগুনের কথা জানিয়েছিল। সেই সময় বলেছিল সে আটকে পড়েছে। এরপর তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাওয়া যায়নি। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আকলিমার লাশ উদ্ধার করে। জানা গেছে, আকলিমার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। তিনি রাজধানীর বসিলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, খাজা টাওয়ার ভবনটিতে সেফটি প্ল্যান ছিল না। ভবনটিতে দাহ্য পদার্থ বেশি ছিল। সে কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কেউ বলছেন, চারতলা থেকে ৯, ১০ ও ১১ তলায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। আবার কেউ বলছেন, ১১ তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে যখন আমরা তদন্ত শেষ করব তখন বলা যাবে কোথা থেকে এবং কী কারণে আগুনের সূত্রপাত। আপাতত মনে হচ্ছে কোনো বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হয়তো আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিস ভবনটি থেকে মোট ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে সাতজন পুরুষ ও তিনজন নারী।

সর্বশেষ খবর