বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই যুগ পরেও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে

স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় বেঁধে দিল সরকার

আকতারুজ্জামান

দুই যুগ পরেও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে

বেসরকারি দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি সাময়িক অনুমতি লাভ করে ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘ ২৭ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। একইভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চায়নি ২০০১ সালে অনুমোদন পাওয়া ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ২০০২ সালে অনুমোদন পাওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২০০৩ সালে অনুমোদন পাওয়া দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনের লঙ্ঘন করেই চালাচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, সাময়িক অনুমতির সময় পার হওয়ার পর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি সেগুলো অবৈধভাবেই চলছে।

এবার স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থায়ী সনদের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এক মাসের মধ্যে স্থায়ী সনদ প্রাপ্তির আবেদন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ সাত বছর। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে এ সাময়িক অনুমতি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা যাবে। সে হিসাবে আইন অনুযায়ী ১২ বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ আইনের প্রতিফলন কার্যত নেই। বছরের পর বছর তারা আইন অমান্য করে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগ পার করলেও এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আইন লঙ্ঘন করে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রবণতা হয়েছে। এটি আর চলতে দেওয়া যায় না। তাই চিঠি দেওয়া হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ এর ধারা ৮ ও ১১ অনুযায়ী সাময়িক অনুমতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়াদ বৃদ্ধি বা স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করেনি সেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে সাময়িক অনুমতিপত্রে উল্লিখিত শর্তগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে সাময়িক অনুমতির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং স্থায়ী সনদের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্থায়ী সনদ প্রাপ্তির জন্য এক মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানিয়েছে, সাময়িক অনুমতির মেয়াদ পার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করতে চায় ইউজিসি। তবে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। ইউজিসি তাদের এই সময় দিতে নারাজ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ এই প্রতিবেদককে বলেন, সাময়িক অনুমতির সময় পার হওয়ার পর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি সেগুলো অবৈধভাবে চলছে। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করেন যে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ তাহলে কিছুই বলার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের স্বার্থেই স্থায়ী ক্যাম্পাসের সনদ নিতে হবে। বৈধতা বজায় রেখে আইন মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর