বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাসপাতালে তাণ্ডব ইসরায়েলি বাহিনীর

প্রতিদিন ডেস্ক

অনবরত গুলিবর্ষণ করতে করতে ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় ঢুকে তান্ডব চালিয়েছে। তারা সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই গুলি করে হতাহত করেছে। সব শেষে তারা ৩০ জন হাসপাতাল কর্মীকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে হাসপাতালের বাইরে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছে। আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি। একটি খবরে বলা হয়েছে, গতকাল প্রায় ৩০ জনকে হাসপাতাল ভবনের ভিতর থেকে আটক করে বাইরে আনা হয়। তাদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই জেরা করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সবারই চোখ বাঁধা এবং পরনের পোশাক খুলে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায়ই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাদের জেরা করা হচ্ছে। তাদের ঘিরে রেখেছে তিনটি ট্যাংক। একটি ট্যাংক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রাখা হয়েছে, যাতে হাসপাতালের ভিতর কেউ চলাফেরা করতে না পারে। সূত্র জানায়, হাসপাতালের বিশেষায়িত সার্জারি বিভাগের ভিতর ইসরায়েলি কমান্ডোরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সব দেয়াল ও পার্টিশন ভেঙে ফেলছে। প্রত্যেকটি কক্ষের মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলার পর সেনারা বেসমেন্টে নেমেছে। বেসমেন্ট থেকে একজন একজন করে ডেকে এনে হাসপাতাল কর্মীদের জেরা করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের এক রেডিও চ্যানেলের বক্তব্যে বলা হয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে হামাসের হাতে আটক কোনো জিম্মিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো সূত্র বলছে, সেখানে হামাসের উপস্থিতি না থাকলেও ইসরায়েলি বাহিনী এ ধরনের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করবে। এখন পর্যন্ত আল-শিফায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, জিম্মি বা সুড়ঙ্গপথের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পায়নি ইসরায়েল। এ হাসপাতালের অভিযান সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক সেনা লাউডস্পিকারে আরবিতে বলতে থাকে, ‘১৬ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী সব পুরুষ মাথার ওপর দুই হাত তুলে দাঁড়ান।’ এরপর হাসপাতালের গেট দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢোকে ইসরায়েলি সেনাদল। প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, হাসপাতাল থেকে কেউ বের হতেও পারছেন না, সেখানে কেউ ঢুকতেও পারছেন না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে হাসপাতালের রোগী, চিকিৎসক ও সেখানে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা হাসপাতালের ভিতরের পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। নিহতদের লাশ দাফন করারও জায়গা নেই। পচা লাশের গন্ধ পুরো হাসপাতালে। হাসপাতালটির পরিচালক মোহাম্মাদ আবু সালমিয়া গতকাল জানান, কমপ্লেক্সের ভিতর গণকবর খুঁড়ে ১৭৯টি মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। এদিকে হাসপাতালে অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী এখন হাসপাতালের বেসমেন্টে আছে। সেখানে তারা তল্লাশি চালাচ্ছে। কমপ্লেক্সের ভিতরেও আছে সেনারা। সেখানে নির্বিচার গুলি ও বোমাবর্ষণ করছে। এদিকে আল-শিফা হাসপাতালে সেনাদের অভিযানের পর হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা এ অভিযানের জন্য দখলদার ইসরায়েল সরকার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী বলে মনে করি এবং আল-শিফা হাসপাতালে এ হামলার পরিণতি তাদেরই বহন করতে হবে।’ অন্যদিকে, জিহাদ আন্দোলন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার বাহিনীকে আল-শিফা হাসপাতালে অভিযানের জন্য আমেরিকা সাহায্য করেছে। দখলদারদের গাজায় কোনো সামরিক অর্জন নেই, তবু তারা গাজার বেসামরিক লোকজন এবং রোগীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছে।’

সর্বশেষ খবর