বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের রায় প্রকাশ

ঔষধ প্রশাসনের কঠিন দায় ভেজাল প্যারাসিটামলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনের দুই ঘটনায় ১০৪ শিশুর মৃত্যুতে ঔষধ প্রশাসনের ‘কঠিন দায়’ রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মারা যাওয়া ওই ১০৪ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গত বছর এই রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ। গতকাল ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। এই রায়ের অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে এ মামলায় রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

রায়ে আটটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাই কোর্ট। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- এক. প্রত্যেক ব্যক্তির বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার তার বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা। দুই. ওষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রতিপক্ষদের নির্দেশ প্রদান করা হলো। তিন. ১৯৯১ সালে ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২৮ জন শিশুর মৃত্যু ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কঠিন দায়। চার.  ১৯৯১ সালের ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালের ২৮ জন শিশুর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ওই ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি, ওষুধ কোম্পানি থেকে আদায় করতে পারবেন। পাঁচ. একটি স্বাধীন জাতীয় ভেজাল ঔষধ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করা হলো। ছয়. দরখাস্তকারী কর্তৃক ২০২২ সালের ২ জুন তারিখে দাখিল করা সম্পূরক হলফনামায় বর্ণিত পরামর্শগুলো বিবেচনার জন্য প্রতিপক্ষদের নির্দেশ প্রদান করা হলো। সাত. ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গেজেটে অতিরিক্ত প্রকাশিত জাতীয় ঔষধ নীতি-২০১৬ দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ প্রদান করা হলো। আট. যুক্তরাজ্যের আদলে আমাদের দেশের জনগণের চিকিৎসাসেবা অবকাঠামো তৈরি করার পরামর্শ প্রদান করা হলো। এর আগে ২০২২ সালের ২ জুন ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ১০৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারপ্রতি ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাই কোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ওই সময় রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, ১৯৯১ সালে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু এবং ২০০৯ সালে রিড ফার্মার প্যারাসিটামল সেবন করে ২৮ শিশু মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১০ সালে পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে জনস্বার্থে প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়। একই বছর শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট ঔষধ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে রুল দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর