শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচনের আগে নতুন রুট চালু হচ্ছে না

ধুঁকছে ঢাকা নগর পরিবহন

হাসান ইমন

ধুঁকছে ঢাকা নগর পরিবহন

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চালু হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহন। লক্ষ্য ছিল বাসের মান ও সেবা উন্নত করে যাত্রী হয়রানি কমানো। কিন্তু সেই লক্ষ্যের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় ধুঁকছে ঢাকা নগর পরিবহন। বাসের সংকট আর রুটগুলোতে অবৈধ বাসের দৌরাত্ম্যের কারণে সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা। তিন রুট চালু করতে পারলেও আরও তিন রুট চালুর আশ্বাস এখনো স্বপ্নই থেকে গেল। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ উদ্যোগ আপাতত বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চালু হয় ‘ঢাকা নগর পরিবহন’-এর ২১ নম্বর রুট। এই রুটে ৫০টি বাস দিয়ে যাত্রা হয়েছিল। এর মধ্যে বিআরটিসির ৩০ ও ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি। ওই সময় বলা হয়েছিল, এই রুটে ক্রমান্বয়ে ১০০টি বাস নামবে। কিন্তু বাস না বেড়ে উল্টো কমেছে। এরই মধ্যে ট্রান্স সিলভা পরিবহন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। সড়কে শুধু বিআরটিসির ৩০টি বাস। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫টি এই রুটে চলাচল করছে। এতে এই রুটে নগর পরিবহন বাসের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। এরপর ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চালু হয়। এর মধ্যে ২২ নম্বর রুটে (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-ফার্মগেট-শাহবাগ-কাকরাইল-ফকিরাপুল-মতিঝিল-কাজলারপাড়-ডেমরা) ৩০টি বাস দিয়ে শুরু করে হানিফ পরিবহন। এরই মধ্যে বাসের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এখন ২০-২২টি বাস এই রুটে চলাচল করে। আর ২৬ নম্বর রুটে ৫০টি বিআরটিসির ডাবল ডেকারের বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৩০টি দিয়ে শুরু হয়। তাও এখন কমে ২০-২২টিতে দাঁড়িয়েছে। বাস সংকটের কারণে ভোগান্তিতে যাত্রীরা।

নগর পরিবহনে বাধা অবৈধ বাস : ২১, ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে নগর পরিবহন সেবা চালু হওয়ার পর অন্য বাসগুলো বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়ার পরও চলছে এসব পরিবহন। এর মধ্যে ২১ নম্বর রুটটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে বিদ্যমান ১৩টি রুটের ৩৮২টি বাস চলাচল করছে। ওই পরিবহনগুলো নগর পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী তুলছে। আর ২২ নম্বর রুটে গ্লোরি পরিবহন, মৌমিতা পরিবহন, আশিয়ান পরিবহন, গ্রিন বাংলা, স্বাধীন পরিবহন, অভিনন্দন পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহনসহ অসংখ্য পরিবহন চলাচল করছে। একই সঙ্গে ২৬ নম্বর রুটে কদমতলী সীমানায় আনন্দ পরিবহন, বোরাক পরিবহন, আলদি পরিবহন, রাইদা পরিবহন এবং ঘাটারচর এলাকায় মালঞ্চ পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, মিডলাইন পরিবহন চলাচল করছে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস কেটে অবৈধভাবে বানানো লেগুনা এবং রুট পারমিটবিহীন লেগুনা কাজলা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলাচল করছে। এদিকে সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভা হয়। ওই সভা শেষে চলতি বছরের মধ্যে ২৩, ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটে চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিটিসিএ। দীর্ঘ এই সময়ে নতুন রুটগুলোতে চালু করতে পারেনি কমিটি। তবে ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর রুটে যাত্রাপথ ও স্টপেজ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রুটগুলোতে পরিবহন চালাতে কিছু মালিক আবেদনও করেছেন। এখন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আর বাকি ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটের কিছুই করতে পারেনি কমিটি। এ বিষয়ে ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে। এর মধ্যে ২১, ২২ ও ২৬ রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চলছে। আর ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর রুটে বাস নামাতে কাজ চলছে। এর মধ্যে যাত্রী স্টপেজ নির্ধারণ হয়েছে। যাত্রী ছাউনির নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া এখন ‘র‌্যাপিড পাস’ বিক্রি চলছে। যাত্রীরা মেট্রোরেলের পাশাপাশি নগর পরিবহনেও এই পাস ব্যবহার করে চলতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই রুটগুলোতে নগর পরিবহন চালুর সম্ভাবনা কম। কারণ এই রুটগুলোর আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়নি। একই সঙ্গে বাসও নির্ধারণ করা হয়নি।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, চালু হওয়া নগর পরিবহনের রুটে অবৈধ বাস চলাচল করছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ অবৈধ বাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর