শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমুদ্রপাড় থেকে ঢাকায় ট্রেন

১০২০ যাত্রী নিয়ে পৌঁছল ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সমুদ্রপাড় থেকে ঢাকায় ট্রেন

সমুদ্র শহর কক্সবাজার থেকে এক হাজার ২০ যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছেছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। ট্রেনে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এর আগে গতকাল দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ঝিনুক আদলে তৈরি এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইকনিক রেল স্টেশন থেকে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। সে সময় প্রথম ট্রেন যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রথম ট্রেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’-এর যাত্রা পরিদর্শনে রেল প্ল্যাটফর্মে জড়ো হন স্থানীয়রাও। এদিকে গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে কমলাপুর স্টেশন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করে ফিরতি ট্রেন।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে নব নির্মিত আইকনিক স্টেশনে এই রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের এই ট্রেনটিতে ২০টি বগিতে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী রয়েছেন। তিনি জানান, এ রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন ট্রেন ছাড়বে বেলা ১২ টা ৩০ মিনিটে। চট্টগ্রাম পৌঁছবে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছবে পরদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। তিনি জানান, ট্রেনে এসি স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩২৫ টাকা। নন এসি শোভন শ্রেণির ভাড়া ৬৯৫ টাকা। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া এসি ৪৭০ টাকা এবং নন এসি ২৫০ টাকা। গতকাল প্রথম ট্রেনের যাত্রাকালে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি প্রথম ট্রেনের যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাণিজ্যিকভাবে এ রেল পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলো। কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের আন্ত:নগর এই ট্রেন ২০টি বগি নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করবে। এ ট্রেন ডিসেম্বর মাসজুড়ে চলাচল করবে এ রেলপথে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে। জানুয়ারি থেকে এই রুটে রেলের সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রথম যাত্রীবাহী ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের চালক লোকোমাস্টার আব্দুল আউয়াল রানা জানান, কক্সবাজার থেকে যাত্রী নিয়ে প্রথম ঢাকায় যাচ্ছে ট্রেন। এ ট্রেনটি চালানোয় ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। আমার জন্য এটি একটি স্বপ্নের মতো, খুবই ভালো লাগছে। তিনি বলেন- তার প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ার পর যে আনন্দ হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি আনন্দ লাগছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. আপেল মাহমুদ জানান, ট্রেনের প্রথম যাত্রার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন অনেক বেশি বাড়বে। তাই পর্যটকদের সেবা, নিরাপত্তায় সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত থাকবে। টহল টিমের পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্স। পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।’ কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় কক্সবাজারবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের তুলনায় কয়েক গুণ পর্যটক বাড়বে। রাজধানীর সঙ্গে রেল যোগাযোগের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার পর্যটন খাতে নতুন দিগন্তের যুগে সুচনা হলো। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি কক্সবাজারসহ দেশের অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। মাদক পাচার রোধে রেল স্টেশনে স্ক্যানার মেশিন বসানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথে যেখানে ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছে না, সেখানে ট্রেনযোগেও মাদক পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে রেল স্টেশনে স্ক্যানার মেশিন বসানো অতিব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প ২০১০ সালে অনুমোদন পায়। ২০১১ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৬ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করার পর গত ১১ নভেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পের খরচ ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর রেল লাইনের দৈর্ঘ্য দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার।

কক্সবাজার শহরের ঝিলংজায় ঝিনুকের আদলে তৈরি এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইকনিক রেল স্টেশনটি সকাল থেকে হাজারো যাত্রীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে। কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত এই স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয় তলা এই ভবনে রয়েছে নানা সুযোগ সুবিধা। এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে ইতোমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়েছে। ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রুটে ট্রেনের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।

বিমানের আদলে ট্রেনে নারী এটেনডেন্ট : রেল যোগাযোগে ইতিহাস সৃষ্টি করা ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল পথে প্রথমবারের মত বিমানবালার (এয়ার হোস্টেস) আদলে দেওয়া হয়েছে নারী এটেনডেন্ট। গতকাল প্রথমদিনে নারী এটেনডেন্টরা যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করেন। যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ২৪ জন এটেনডেন্ট (ট্রেন হোস্টেস)। এর মধ্যে ৯ জন ছিলেন নারী। ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ২৬ জন নারী এটেনডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ চালু হতে যাওয়া নতুন সুবর্ণ এক্সপ্রেসেও আসা-যাওয়া মিলে ২০ জন নারী এটেনডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর